দুই মাসে কুমিল্লায় অন্তত সাতটি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী এবং পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল হক চৌধুরী। এসব কর্মসূচি করতে গিয়ে তাঁর অনুসারী নেতা–কর্মীরা কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কেউ হামলার শিকার হয়েছেন। কারও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে ডেকোরেটরের চেয়ার ও মঞ্চ।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ, লালমাই ও মহানগরের বিভিন্ন এলাকার বিএনপিদলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে হামলা হয়।
মনিরুলের অনুসারীদের অভিযোগ, গত ২৯ জুন সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা ইউনিয়নের জোলাই গ্রামে ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান তিনি। এ সময় তাঁকে বাধা দেন পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। গত ৬ জুলাই লালমাইয়ের পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন ও বাকই উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়। মনিরুল কর্মসূচিতে পৌঁছার আগেই সভামঞ্চ, চেয়ার–টেবিল ভাঙচুর করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। পরে ওই ঘটনা নিয়ে পদুয়ার বাজারে হোটেল নুরজাহানে সংবাদ সম্মেলন করেন মনিরুল হক। অনুমতি ছাড়া কেন তিনি সংবাদ সম্মেলন করছেন, এ কারণে সদর দক্ষিণ মডেল থানা–পুলিশ গিয়ে বাধা দেয়। ব্যানার খুলে নিয়ে যায়। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ধনাইতরি এলাকায় কর্মিসভার আয়োজন করে ওয়ার্ড বিএনপি। এ কারণে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কুদ্দুসের বাড়িঘর কুপিয়ে দেন কাউন্সিলর আবুল হাসানের অনুসারীরা। ২৬ আগস্ট ১৯-২৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা–কর্মীদের নিয়ে বিএনপি কালো পতাকা মিছিল করার ঘোষণা দেয় সদর দক্ষিণ উপজেলার সামনে শ্রীমন্তপুরে। পুলিশি অনুমতি না মেলায় সেটি করতে পারেনি।
২৬ আগস্ট লালমাইয়ে বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের উন্দানিয়া গ্রামে ইউনিয়ন বিএনপির বর্ধিত সভা ছিল। ওই সভা শুরুর এক ঘণ্টা আগে লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান ও লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়াত উল্লাহর নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০টি মোটরসাইকেল নিয়ে হামলা চালানো হয়। এ সময়ে গুলিবর্ষণে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন অন্তত ২০ জন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা বর্ধিত সভার জন্য আনা চেয়ার ও মঞ্চ ভাঙচুর করেন। বিএনপির নেতা–কর্মীদের দাবি, এই সময় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামের ঘরে লুটপাট করা হয়। এ ছাড়া সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিনিধি সভা করতে পারেননি তিনি।
বিএনপি জানায়, মনিরুল হক ১৯৮৮, ১৯৯১ ও ২০০১ সালে কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম মজুমদার ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে হারিয়েছেন (তবে ১৯৯৬ ও ২০১৮ সালে অর্থমন্ত্রীর কাছে পরাজিত হন)। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। ২০১৮ সালে তিনি কারাগারে থেকে কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও লালমাই) আসনে নির্বাচন করেন। এবারও তিনি এই আসনে নির্বাচন করতে চান। এ কারণে দলীয়, সাংগঠনিক ও নিজের প্রচারণায় তিনি ক্ষমতাসীন দল থেকে বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।
লালমাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান বলেন, ‘আমরা মনিরুল হক চৌধুরীকে বাধা দেব কেন?’
সদর দক্ষিণ থানার ওসি দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, ‘কর্মসূচি করলে জানাতে হয়। অনুমতি ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করায় বারণ করেছি।’
জানতে চাইলে মনিরুল হক বলেন, ‘আমি কর্মসূচি দিলেই পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ বাধা দেয়। নেতা–কর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করে। কর্মীদের গুলি করে, কোপ দেয়। মামলা করে। এভাবে তো গণতন্ত্র হয় না।’