ঈদের বিকেল থেকেই পর্যটকে মুখর সাগরকন্যা কুয়াকাটা

ঈদের ছুটিতে চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। আজ শনিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

রমজান মাসজুড়ে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলো ছিল ফাঁকা। খাবার রেস্তোরাঁতেও ভিড় ছিল না। সৈকতের চেনা কোলাহলও ছিল অনুপস্থিত। তবে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নীরবতা ভেঙে চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা।

আজ শনিবার ঈদের বিকেল থেকেই কুয়াকাটায় পর্যটক-দর্শনার্থীর ভিড় দেখা গেছে। তবে দূরদূরান্তের চেয়ে নিকটবর্তী এলাকার পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পর্যটক, কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশ ও হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সারা দিন মূলত বরগুনা, আমতলী, পটুয়াখালী ও কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনই সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে এসেছিলেন। কাল রোববার থেকে দূরদূরান্তের পর্যটকেরা আসতে শুরু করবেন। ইতিমধ্যে কুয়াকাটার বেশির ভাগ হোটেল-মোটেলের কক্ষ বুক হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।

কলাপাড়া পৌর শহরের মাদ্রাসা সড়ক এলাকার বাসিন্দা শোয়েব মাহমুদ বলেন, ‘কলাপাড়া শহরে ঈদের নামাজ পড়েছি। এরপর পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দময় সময় কাটিয়েছি। দুপুরের পর পরিবারের সবাই মিলে কুয়াকাটায় চলে আসলাম। ঈদের বিকেলটা বেশ ভালোই কেটেছে।’

বরগুনার বামনা উপজেলার শহরের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কুয়াকাটায় এসে পুরো বিকেল সৈকতেই ঘুরেছি। মুড়ি-চানাচুর খেলাম। তবে টুনা মাছের বারবিকিউ বেশ মজার ছিল। কাছের এলাকা হিসেবে কুয়াকাটায় এসে আমরা বরাবরই উপভোগ করি।’

কুয়াকাটার লেম্বুর চর, শুঁটকিপল্লি, জাতীয় উদ্যান, রাখাইন মহিলা মার্কেট ঘুরে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। এর মধ্যে শামুক-ঝিনুকের দোকান, ফুচকা-ডাব ও মাছ ফ্রাইয়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা বেশি ছিল।

কুয়াকাটার মাছ ফ্রাইয়ের দোকানদার মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, দূরের পর্যটকেরা কাল থেকে আসতে শুরু করবেন। আজ মূলত আশপাশের এলাকার মানুষজন বেড়াতে এসেছেন। ঈদের প্রথম দিনে বেচাকেনা ভালোই হয়েছে। টুনা মাছের বেশি চাহিদা ছিল। এ ছাড়া কাঁকড়া, লবস্টার, কোরাল মাছের ফ্রাইয়ের বিক্রি ভালো হয়েছে।

এদিকে কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল-মোটেল আছে ৭৪টি। এর বাইরে আছে ৫৬টি হোটেল-মোটেল। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির হোটেল রয়েছে ১০-১৫টির মতো। প্রথম শ্রেণির এসব হোটেল-মোটেলের প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। এর বাইরের হোটেল-মোটেলেরও ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। সামনে ছুটি থাকায় এসব হোটেলের কক্ষের বুকিংও পূর্ণ হবে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে কুয়াকাটায় চাপ বহুগুণে বাড়ছে বলে জানান কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (কুটুম) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির। তিনি বলেন, কুয়াকাটার একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়, এটা হচ্ছে কুয়াকাটার প্রতি পর্যটকদের ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ। এ ছাড়া কক্সবাজারের চেয়ে কুয়াকাটায় যেতে এখন সময়ও কম লাগে। তাই পর্যটকেরা ঈদসহ নানা ছুটিতে কুয়াকাটায় বেশি যাচ্ছেন।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এম বাচ্চু বলেন, ঈদের দিন দুপুরের পর থেকেই  কুয়াকাটায় দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। তাঁদের অনেকেই সাগরের পানিতে গোসল করেছে। আবার কেউ কেউ ট্রলার, রেসিং বোটে চরে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমরা তৎপর রয়েছি। সৈকত, হোটেল-মোটেল এলাকা এবং পর্যটন স্পটগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে পর্যটন পুলিশের ছয়টি দল কাজ করছে। সাদাপোশাকেও পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। ফায়ার সার্ভিসের একটি দলকেও সার্বক্ষণিক থাকতে বলা হয়েছে। মোটকথা নিরাপত্তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবাসিক হোটেল-মোটেল, খাবার হোটেলে আমরা মূল্যতালিকা টানিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছি। পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য সৈকতকে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটনকেন্দ্রিক প্রতিটি সেবা খাতকেও আমরা নিয়মনীতি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছি। কেউই পর্যটকদের হয়রানি করতে পারবেন না। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োজিত করা হয়েছে।’