‘আড্ডাফেরত’ পাঁচজনের মৃত্যু কীভাবে, কিশোরগঞ্জে আলোচনা এখন সেটা নিয়ে
পরপর দুই দিনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদকসহ পাঁচজনের মৃত্যু ও একজনের লাইফ সাপোর্টে থাকার ঘটনার একটি যোগসূত্র আছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় প্রায় সবার ধারণা, শনিবার রাতে তাঁরা সবাই শহরের কোনো এক স্থানে আড্ডায় ছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পর একে একে সবাই অসুস্থ হন এবং এর মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
সূত্রগুলো বলছে, মৃত্যুর কারণ নিয়ে নানা মত আছে। পুলিশ ও চিকিৎসকেরাও নিশ্চিত নন। তবে অসুস্থ হওয়ার আগে শনিবার রাতে তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন, এ বিষয়ে ভিন্নমত নেই। কোথায় তাঁরা একসঙ্গে ছিলেন, সেটি জানার আগ্রহ সবার। কুলিয়ারচরে এখন এই ঘটনা নিয়েই সর্বত্র আলোচনা চলছে।
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিনের ব্যবধানে ঘনিষ্ঠ পরিচয় থাকা পাঁচজনের মৃত্যুকে সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। সুতরাং ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত সব দিক নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শনিবার রাতে তাঁরা কোথায় ছিলেন এবং কী করেছেন, সেটি জানার চেষ্টায় আছে পুলিশ।
এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের বেশির ভাগই পূর্ণাঙ্গ কোনো মতামত না দিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। এর মধ্যে আছে, মৃত্যুর তালিকায় নতুন করে আর কেউ যুক্ত হলো কি না, আড্ডাটা কোথায় দিয়েছিলেন, কতজন ছিলেন, খাদ্যতালিকায় কী কী থাকতে পারে, সবাই একসঙ্গে অসুস্থ হলেন কেন, চিকিৎসা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের লুকোচুরির কারণ কী, অসুস্থ ব্যক্তিরাও নিজের অসুস্থতাবোধের কথা পরিবারকে দেরিতে জানালেন কেন। আলোচনার বিশেষ প্রশ্ন হয়ে উঠেছে, খাদ্যে বিষক্রিয়া ছিল কি না বা তাঁরা অ্যালকোহল গ্রহণ করেছিলেন কি না।
দলীয় সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ফেরা প্রশ্নের বেশির ভাগ উত্তর রাজনৈতিক সহকর্মীদের জানা। তবে এ বিষয়ে শুরু থেকে ছোট–বড় সব নেতা সতর্ক অবস্থানে আছেন। বিশেষ প্রয়োজন না হলে নিজেদের মধ্যেও তাঁরা ইস্যুর গভীরে আলোচনায় যাওয়া থেকে বিরত থাকছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তাঁদের ভাষ্য এক কিংবা দুই বাক্যের। তাও সেটি দুঃখপ্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা শুরু থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন। তবে তিনি এ নিয়ে বেশি কথা বলতে রাজি নন। তিনি বলেন, এ নিয়ে বেশি কথা বলার সুযোগ নেই। কুলিয়ারচরবাসী এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। মৃত্যু কীভাবে হলো, এটা নিয়ে সবার মনে অনেক প্রশ্ন।
কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন (৫৫) ও জহির রায়হান (৫৭) দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ। সোমবার এই দুই নেতার মৃত্যু হয় এক ঘণ্টার ব্যবধানে। একই দিন হাসপাতালে মারা যান তাঁদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হোমিও চিকিৎসক গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস। সন্ধ্যায় মারা যান আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনের চা-দোকানি লিটন মিয়া (৪০)। আর আগের দিন রোববার মৃত্যু হয় শাহজাহান মিয়া নামের এক রিকশাচালকের। শাহজাহানের বাড়ি বাজিতপুর উপজেলার গাজীরচর ইউনিয়নের চিন্নাইচর গ্রামে। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কুলিয়ারচরে বসবাস করে আসছিলেন। শাহজাহান তাঁদের নানা কাজের সহযোগী ছিলেন।
ওই আড্ডায় তাঁদের সঙ্গী পৌরসভার প্যানেল মেয়র হাবিবুর রহমান আছেন লাইফ সাপোর্টে ঢাকার একটি হাসপাতালে। হাবিবুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। গোবিন্দ্র একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। কয়েক বছর ধরে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে চলতেন।
মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে রিকশাচালক শাহজাহান মিয়া ছাড়া অন্য চারজনই চিকিৎসা নিয়েছেন জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে বলা আছে, গিয়াস উদ্দিন ও জহির রায়হানের শরীরে অ্যালকোহলের (অ্যালকোহল অ্যাবিউসার) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে গোবিন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস মারা যান হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে। শাহজাহান ও লিটন সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।