স্ত্রীকে চেতনানাশক খাইয়ে শিশুসন্তানকে লাখ টাকায় বিক্রি, ছয় দিন পর উদ্ধার

মাদারীপুরে চুরি যাওয়া সন্তান আলিফকে উদ্ধারের পর মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ
ছবি: সংগৃহীত

মাকে চেতনানাশক খাইয়ে চুরি করা হয় দুই মাসের শিশু আলিফকে। পরে দালালের মাধ্যমে এক লাখ টাকার বিনিময়ে নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দেন বাবা ও দাদি। মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার ছয় দিনের মাথায় আজ মঙ্গলবার বিকেলে শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার চরঠ্যাঙ্গামারা এলাকার ঘটনা এটি। ওই গ্রামের আলিরাজ সরদার-কাজল আক্তার দম্পতির শিশুসন্তান আলিফ। আলিরাজ পেশায় একজন রিকশাচালক। শিশুটি বিক্রিতে বাবাকে সহযোগিতা করেন দাদি পারুল বেগম ও শহরের পুরানবাজার এলাকার দালাল নাসিমা বেগম। পরে সবাই টাকা ভাগাভাগি করে নেন। এ ঘটনায় তাঁদের শাস্তি ও বিচারের দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

আলিফের মা কাজল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমার পাশে আলিফ নাই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারি, আমার বুকের ধনকে বিক্রি করে দেওয়া হইছে। আমার স্বামী ও শাশুড়ি মিলে এমন কাজ করতে পারবে, আমি চিন্তাও করতে পারি নাই। যারা এই জঘন্য কাজ করেছে, আমি তাঁদের বিচার চাই।’

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার রাতের খাবারের সঙ্গে স্বামী আলিরাজ সরদারের দেওয়া চেতনানাশক খেয়ে কাজল আক্তার ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে পাশে আলিফকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন মা কাজল আক্তার। স্বামী আলিরাজ সরদারকে দেখতে না পেয়ে বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতেও খোঁজ করেন। পরে জানতে পারেন এক লাখ টাকার বিনিময়ে সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ছোট দুধখালী গ্রামের জামাল হাওলাদারের কাছে শিশুসন্তানকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি থানা-পুলিশকে জানালে আজ বিকেলে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে আলিফকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

শিশু আলিফ
ছবি: সংগৃহীত

কাজল আক্তারের প্রতিবেশী বাবুল ব্যাপারী বলেন, মাত্র এক লাখ টাকার বিনিময়ে বাবা শিশুটিকে বিক্রি করে দেওয়ায় তাঁরা অবাক হয়েছেন। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

কালকিনি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফয়সাল হাসান বলেন, শিশুটি উদ্ধারের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কাজল আক্তারের স্বামী পালিয়ে যান। এ ঘটনায় শিশুটির মা তাঁদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

পরিদর্শক (তদন্ত) মারগুব তৌহিদ বলেন, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শিশুটিকে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। মা কাজল আক্তার যদি আইনগত সহযোগিতা চান, তাহলে পুলিশ সহযোগিতা করবে।