চট্টগ্রামে ১২ ঘণ্টার মাথায় পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভা। আজ বিকেলেছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে ডাকা পরিবহন ধর্মঘট ১২ ঘণ্টার মাথায় প্রত্যাহার করেছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। আজ রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভার পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানান চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী। তিনি পরিবহন সংগঠনের পক্ষ থেকে চারটি দাবির কথা জানান।

দাবিগুলো হলো কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কে গাড়ি চলাচলে নিরাপত্তাদান, গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ, অবৈধ গাড়ির বিষয়ে ব্যবস্থা ও শ্রমিকদের মানে অকারণে মামলা না করা। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।

এর আগে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) তিনটি বাসে আগুন দেওয়া, লাইনম্যান এবং পরিবহনশ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার, মুক্তিসহ চার দাবিতে আজ সকাল ছয়টা থেকে চট্টগ্রামের পাঁচ জেলায় ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

পরিবহন নেতাদের দাবি, চুয়েটে গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানোয় পরিবহনশ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া সড়কে চাঁদাবাজির কারণে বিভিন্ন সময় মালিকপক্ষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

সভায় নিজেদের দাবিগুলো তুলে ধরে পরিবহননেতারা জানান, চুয়েটে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটির বিচার আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানো পরিবহনমালিক–শ্রমিকদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। এ সময় গাড়ি পোড়ানোর বিষয়েও মামলার দাবি তাঁদের।

সভায় চট্টগ্রাম নগর–পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, মামলা প্রত্যাহারের যে দাবি তোলা হয়েছে, সেটি আসলে তদন্তের আগে জানানো সম্ভব নয়। আর গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে কেউ মামলা করতে চাইলে করতে পারবে। এ ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া হলে নগর–পুলিশ পাশে থাকবে।

সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী, বিআরটিএ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার, রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহেবুব প্রমুখ।

পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম নগরে থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস। ভোগান্তি সয়ে ছোট ট্রাকে চড়ে গন্তব্যে যান যাত্রীরা। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায়
ছবি: সৌরভ দাশ

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে যে তিনটি প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেগুলোর বিষয়ে ইতিমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সড়ক সংস্কার, নিহত-আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণসহ সড়কের শৃঙ্খলার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পরিবহন নেতাদের দাবির প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তদন্ত সাপেক্ষেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে যদি মামলা হয়ে থাকে, সেটিও আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা হবে। এ ছাড়া সড়কে কোনো চাঁদাবাজি করা যাবে না। আর নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সহায়তাও থাকবে।

এদিকে ধর্মঘটের কারণে বাস ও গণপরিবহন চলাচল না করায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকা, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ও অক্সিজেন মোড় থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলাগামী বাস ছেড়ে যায়নি। নগরেও গণপরিবহনের সংখ্যা কম ছিল। তবে পিকআপ, সিএনজি, টেম্পো ও পণ্য পরিবহন মালিক-চালক ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ অটোরিকশা হালকা যান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এ ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করায় চলেছে কিছু যানবাহন।