সুপেয় পানির তীব্র সংকট, দুর্ভোগে নগরবাসী

প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের প্রতিদিন আট কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। বিপরীতে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

সিলেট নগরের তোপখানা এলাকায় সিলেট সিটি করপোরেশনের পানির ট্যাংকটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। ছবিটি সম্প্রতি তোলাপ্রথম আলো

সিলেট নগরে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এবার শুষ্ক মৌসুম শুরুর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘন ঘন লোডশেডিং। এর ফলে প্রতিদিনই বিশুদ্ধ পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরের বাসিন্দারা।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের প্রতিদিন আট কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। বিপরীতে প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার কোটি লিটার পানি সরবরাহ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এদিকে এক বছর ধরে অকেজো রয়েছে তোপখানা পানির পাম্প হাউজ।

বর্তমানে কুশিঘাট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় এক কোটি লিটার পানি উৎপাদন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিসিকের অনুমোদিত দুই হাজার গভীর নলকূপের পাম্প রয়েছে। সিসিকের বৈধ পানির গ্রাহক রয়েছেন ১৮ হাজার। এসব গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন চার থেকে সাড়ে চার কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

সিসিকের কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির জন্য তাঁদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ সময় সিটি করপোরেশন চাহিদামতো পানি সরবরাহ করতে পারে না। এবার বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং পানির সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদিনই পানির জন্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন গ্রাহকেরা।

নগরের শিবগঞ্জ লামাপাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহমান জানান, তাঁর পরিবারে সাতজন সদস্য। পানির অভাব সব সময় লেগেই থাকে। দিনে একবার এক ঘণ্টা পানি দেয় সিটি করপোরেশন। পর্যাপ্ত পানি তোলার আগেই সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অনেকে অবৈধভাবে লাইন দিয়ে পানি নিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সরকারি চাকরিজীবী দরগাহ মহল্লার বাসিন্দা নুর মিয়া জানান, প্রায় প্রতিদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় দেখা যায়, পানি নেই। পানির অভাবে গোসলসহ প্রয়োজনীয় কাজ না করেই তাঁকে অফিসে যেতে হয়।

নতুন ১২টি ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ সীমানা বর্ধিতকরণসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে সিসিক। সে অনুযায়ী, ৪৯টি ওয়ার্ড নিয়ে সিসিকের বর্তমান আয়তন হচ্ছে ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার।

সিসিক সূত্র জানায়, এলাকা সম্প্রসারণ ও পানির চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২০১৪ সালে বড়শালায় (সারি নদ) ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর জন্য ১৩ একর জায়গা অধিগ্রহণসহ ৮০৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরে ১৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের সক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্ট নির্মাণে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রকল্পের জন্য ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও) পাঠান। কিন্তু প্রক্রিয়া গ্রহণের আট বছরেও এই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সিসিকের পানি শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, সিসিকের লোকসংখ্যা অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় আট কোটি লিটার পানির প্রয়োজন। তবে পানির বৈধ গ্রাহকের চাহিদা ও পরিমাণ অনুয়ায়ী প্রতিদিন পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রাহকেরা চাহিদা অনযায়ী পানি না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকে অনুমোদিত আকারের চেয়ে বড় পাইপ দিয়ে পানি উত্তোলন করছেন। অনেকে পানির লাইনে অবৈধভাবে মোটর বসিয়েছেন। এ ছাড়া একটি পরিবার ভেঙে দু–তিনটি পরিবার হয়েছে। এর ফলে পানির চাহিদা বেড়েছে। তাই অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করায় ও লোডশেডিংয়ে মাঝেমধ্যে পানির সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, তোপখানার শতবর্ষী পাম্প হাউজ সংস্কার করে এখন আর পানি উৎপাদন সম্ভব নয়।

বড়শালায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট সম্পর্কে আলী আকবর বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে যা যা দরকার, সবকিছু প্রস্তুত করে সিসিকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে সিসিকে পানির সমস্যা থাকবে না।