জন্মদিনে উচ্ছ্বাসে মেতে থাকা মেয়েটির রাতেই মৃত্যু, মানতে পারছেন না কেউ

বন্ধুবান্ধব ও দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে কেক কেটে জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছিলেন সুমাইয়া শেখ। গত বুধবার নড়িয়ার একটি রেস্তোঁরায়ছবি: সংগৃহীত

নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠান নিয়ে বুধবার দিনভর মেতে ছিলেন শেখ সুমাইয়া। বন্ধু ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেক কেটে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন। রাতে বাড়িতে ফিরে ঘুমিয়েছিলেন নিজের ঘরে। বৃহস্পতিবার ভোরে ওই ঘরে সুমাইয়ার ঝুলন্ত লাশ পেয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। উচ্ছ্বাস-আনন্দে মেতে থাকা মেয়েটির কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মৃত্যু মানতে পারছেন না কেউ।

শেখ সুমাইয়া (২০) শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আবু বকর শেখ ও জামিলা দম্পতির ৪ সন্তানের মধ্যে সুমাইয়া মেজ মেয়ে। তিনি নড়িয়া সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পুলিশ ও পরিবার এখনো জানে না, কী কারণে সুমাইয়া মারা গেছেন।

আজ শুক্রবার সকালে নড়িয়া পৌরসভার বৈশাখী পাড়ার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে স্বজন ও দলীয় নেতা-কর্মীদের ভিড়। সুমাইয়ার মা জামিলা খাতুন কান্না করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজনেরা সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। সুমাইয়াদের রাজনৈতিক পরিবার। তাঁর বাবা, চাচারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা ছুটে আসছেন পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে।
সুমাইয়ার মা জামিলা খাতুন কান্না করতে করতে বলছিলেন, ‘আমার মেয়েটি এমন অভিমান কেন করল? আমাকে কে এখন আম্মু বলে জড়িয়ে ধরবে। তোমরা আমার মাকে এনে দাও।’

আরও পড়ুন
ছাত্রলীগ নেত্রী শেখ সুমাইয়ার মৃত্যুতে শোকাহত স্বজনেরা। আজ শুক্রবার সকালে শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার বৈশাখী পাড়ায়
ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বুধবার ছিল সুমাইয়ার জন্মদিন। বন্ধুবান্ধব ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নড়িয়ার একটি রেস্তোরাঁয় জন্মদিনের অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করেছেন সুমাইয়া। সেখানে সবার সঙ্গে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে মেতে ছিলেন তিনি। রাত ১০টার দিকে বাড়িতে আসেন। ঘুমানোর কথা বলে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করেন। বাড়িতে ফিরে পরিবারের কারও সঙ্গে আর কোনো কথা বলেননি।

ভোরের দিকে সুমাইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন আসতে থাকে। মুঠোফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় পরিবারের অন্যদের। তাঁরা দরজার বাইরে থেকে সুমাইয়াকে ডাকাডাকি করেন। সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজা ভেঙে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় সুমাইয়ার মরদেহ ঝুলে থাকতে দেখেন স্বজনেরা। বিষয়টি থানায় জানানো হলে পুলিশ সকালে মরদেহ উদ্ধার করে। গতকাল দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

শেখ সুমাইয়া
ছবি: সংগৃহীত

সুমাইয়া পড়ালেখা ও রাজনীতির পাশাপাশি নাচ শিখতেন। তাঁর নৃত্যের শিক্ষক সোহেল মীরমালত প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাচ-গানে ওর আগ্রহ ছিল। এমন একটি প্রাণবন্ত মেয়ে এভাবে মারা যাবে, তা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রলীগের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সুমাইয়া সব সময় চঞ্চল ও হাসিখুশি থাকতেন। মনের ভেতর কোনো কষ্ট আছে, তা কখনো বোঝা যায়নি। মৃত্যুর পর শুনেছেন, একটি ছেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। জন্মদিনের রাতে কোনো বিষয় নিয়ে হয়তো মান-অভিমান করেছিলেন। তাঁর জন্যই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

সুমাইয়ার চাচা নড়িয়া পৌরসভার কাউন্সিলর আবু জাফর শেখ প্রথম আলোকে বলেন, সুমাইয়া পরিবারের অনেক আদরের ছিল। মারা যাওয়ার আগে-পরে তাঁর ফোনে একটি নম্বর থেকে অনেক কল এসেছিল। পুলিশকে অনুরোধ করেছেন, ওই নম্বর ধরে সুমাইয়ার মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটন করার জন্য।

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগ নেত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। তাঁর ময়নাতদন্তের সময় ডিএনএ ও ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেদন এলে অনেক কিছু বোঝা যাবে। একটি নম্বর থেকে অনেক ফোন এসেছিল। ওই নম্বর ধরেও তদন্ত করা হচ্ছে।