র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার যাবজ্জীবন কারাণ্ডপ্রাপ্ত মবজেল হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মানিকগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পে
ছবি: সংগৃহীত

আট বছর আগে একটি হত্যাকাণ্ডের পর পলাতক ছিলেন তিনি। এ ঘটনায় করা মামলায় পাঁচ বছর আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তাঁর। কিন্তু ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেপ্তার এড়াতে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ঘুরে বেড়াতেন; ঘন ঘন পরিবর্তন করতেন পেশা। অবশেষে ধরা পড়ে গেলেন র‌্যাবের হাতে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার ধামরাই উপজেলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মবজেল হোসেন (৩৩)। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বুদুটি বানীবন গ্রামে।

র‍্যাব-৪ সূত্রে জানা গেছে, হরিরামপুর উপজেলার বলড়া গ্রামের হালিম খান ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। ২০১৪ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে মোটরসাইকেলের ভাড়া নিয়ে তাঁর সঙ্গে মবজেল, আবদুর রাজ্জাক, ছমির হোসেন ও বাতেন মিয়ার কথা-কাটাকাটি ও মারামারি হয়। এ ঘটনার জের ধরে ওই বছরের ১৪ মার্চ রাতে হরিরামপুরের লেছড়াগঞ্জ এলাকায় গলায় গামছা পেঁচিয়ে হালিমকে হত্যা করেন তাঁরা। হত্যা নিশ্চিত করতে হালিমের হাত ও পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়। এরপর হালিমের মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা।

ঘটনার দিন রাতে হালিম বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাঁকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তাঁর সন্ধান না পাওয়ায় পরের দিন হালিমের স্ত্রী ফরিদা হরিরামপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ১৮ মার্চ পুলিশ হালিমের মোটরসাইকেলসহ ছমিরকে আটক করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হালিমের লাশ উদ্ধার করা হয়।

ওই দিনই হালিমের স্ত্রী বাদী হয়ে ওই চারজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ আসামি রাজ্জাক ও বাতেনকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এর মধ্যে আসামিরা জামিনে কারামুক্ত হন। মামলা চলাকালে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান বাতেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মবজেল পলাতক ছিলেন। ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান খান দুই আসামি ছমির ও রাজ্জাকের উপস্থিতিতে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।

র‍্যাব-৪ এর সিপিসি-৩ মানিকগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মবজেল ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাইসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে পেশা পরিবর্তন করে আসছিলেন। প্রথম দিকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকের কাজ করতেন। সম্প্রতি তিনি ধামরাইয়ের ইসলামপুর এলাকায় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। সেখান থেকেই বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শুক্রবার বিকেলে তাঁকে হরিরামপুর থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।