কক্সবাজার সৈকতে আবার ভেসে এল কয়েক শ মৃত জেলিফিশ

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা মৃত জেলিফিশ। শনিবার বিকেলে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টেছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আবার ভেসে আসছে মৃত জেলিফিশ। একেকটা জেলিফিশের ওজন ৯ থেকে ১৭ কেজি। সৈকতজুড়ে বিপুলসংখ্যক মৃত জেলিফিশ পড়ে থাকার ঘটনায় উদ্বিগ্ন পরিবেশবাদীরা।

জেলিফিশের সংস্পর্শে এলে শরীরে চুলকানিসহ নানা রোগ দেখা দেয়। তাই সমুদ্রে গোসলে নামা পর্যটকদের জেলিফিশ সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। এর আগে গত মাসের ৩ ও ৪ তারিখ সৈকতে কয়েক শ মৃত জেলিফিশ ভেসে এসেছিল।

আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সৈকতে জেলিফিশ ভেসে আসতে দেখা যায়। তবে গতকাল শুক্রবারের জোয়ারে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মৃত জেলিফিশ ভেসে আসে। আজ সকালের জোয়ারেও ৩০ থেকে ৪০টি মৃত জেলিফিশ ভেসে আসে। সব মিলিয়ে গত তিন দিনে অন্তত ৩১০টি মৃত জেলিফিশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১২০টির বেশি মৃত জেলিফিশ বালুচর থেকে সরিয়ে নিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা। বাকি জেলিফিশগুলো বালুচাপা পড়েছে।

মাসুম বিল্লাহ আরও বলেন, জেলিফিশ দেখতে অনেক সুন্দর। অনেক পর্যটক জেলিফিশ স্পর্শ করেন, কেউ পাশে বসে ছবি তোলেন। জেলিফিশ প্রাণঘাতী না হলেও স্পর্শ করা ঠিক নয়। জেলিফিশের সংস্পর্শে গেলে শরীরে চুলকানিসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে পর্যটকদের সতর্ক করতে গতকাল বিকেল থেকে সৈকতে মাইকিং করা হচ্ছে।

আজ বিকেলে সৈকতের লাবণী, শৈবাল, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের বালুচরে ১০-১২টি মৃত জেলিফিশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

সৈকতে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধারে নিয়োজিত সি সেফ লাইফগার্ডের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল্লাহ সিফাত বলেন, জোয়ারের সময় পানিতে ভেসে থাকে বেশ কিছু মৃত জেলিফিশ। সাদা রঙের জেলিফিশ পানিতে ভাসতে দেখা যায় না। গোসলের সময় জেলিফিশ পর্যটকের শরীর স্পর্শ করলে চুলকানি দেখা দেয়, চামড়া ফুলে যায়। যদিও কয়েক ঘণ্টা পর চুলকানি বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও এ ব্যাপারে পর্যটকদের সতর্ক করা হচ্ছে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, গত তিন দিনে সৈকতের সুগন্ধা, লাবণী, কলাতলী, নাজিরারটেক, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানীসহ টেকনাফ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতে অন্তত ৯০০টি মৃত জেলিফিশ ভেসে এসেছে। ৩ আগস্টের পরের কয়েক দিনও শত শত মৃত জেলিফিশ ভেসে এসেছিল। কী কারণে সাগরে জেলিফিশ মারা যাচ্ছে, কেন ভেসে আসছে—সেটা গবেষণা করা দরকার।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেদারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে মাছ ধরার ট্রলারের জালে আটকা পড়েই বেশির ভাগ জেলিফিশের মৃত্যু হচ্ছে। জেলিফিশ কাছিমের প্রিয় খাবার। কাছিমের সংখ্যা কমে জেলিফিশের সংখ্যাটা বেড়ে যাচ্ছে কি না, তা–ও চিন্তার বিষয়। তা ছাড়া জেলিফিশের আয়ুষ্কালও কম। মাত্র এক থেকে তিন বছর। তবে সমুদ্রদূষণ বা অন্য কোনো কারণে জেলিফিশের মৃত্যু হচ্ছে, এমনটা ধরে নেওয়া উচিত হবে না।

মৎস্যবিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রে একাধিক প্রজাতির জেলিফিশ আছে। সৈকতে ভেসে আসা জেলিফিশগুলো বক্স প্রজাতির। নামের সঙ্গে ফিশ থাকলেও মূলত জেলিফিশ মাছ নয়। এটি অমেরুদণ্ডী প্রাণী।

কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইলিশ ধরতে সাগরে নেমেছে কয়েক হাজার ট্রলার। ট্রলারের জালে জেলিফিশ ধরা পড়লে মেরে না ফেলে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা আছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি বহু জাহাজ গভীর সাগরে মাছ ধরছে। তাদের জালে আটকা পড়েই সম্ভবত জেলিফিশের মৃত্যু হচ্ছে।