কিশোরগঞ্জে ‘গাছ আলু’ চাষে বেশি লাভ, আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে মাচাপদ্ধতিতে ‘গাছ আলু’র চাষ। সাধারণ আলুর চেয়ে অধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর এ আলু স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের। অধিক লাভের আশায় প্রতি মৌসুমেই পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষকেরা এই আলুর চাষাবাদ করছেন। চাহিদা থাকায় ও লাভজনক হওয়ায় অনেকে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এই আলু চাষে।
বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, প্রতি একরে ‘গাছ আলু’ চাষে খরচ হয় মাত্র তিন হাজার টাকা। প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে মাটির ওপর এই আলুর ৩০ থেকে ৩৫ মণ ফলন হয়। প্রতি কেজির বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। সমপরিমাণ জমিতে মাটির নিচের আলুর ফলন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ। প্রতি কেজির দাম পাওয়া যায় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে পাকুন্দিয়া উপজেলায় প্রায় ৪০০ হেক্টরের বেশি জমিতে গাছ আলু এবং মেটে আলুর চাষ হয়েছে। আগে এই আলু বসতবাড়ির আঙিনায় চাষ হলেও বর্তমানে মাঠফসল হিসেবে কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই আলু মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে সম্প্রসারিত হয়েছে। আপৎকালীন ফসল হিসেবে এই আলুর চাষ খুব জনপ্রিয়। কারণ, বর্ষা–পরবর্তী মৌসুমে মাঠে অন্য কোনো সবজি থাকে না। এই ফসল বর্ষার অতিবৃষ্টি সহ্য করতে পারে বলে বর্ষার পরে সবজিটি কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাছ আলুতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে।
কৃষি বিভাগ বলছে, এপ্রিল মাস গাছ আলু রোপণের উপযুক্ত সময়। বীজ রোপণের চার মাস পর থেকে ফলন সংগ্রহ করা যায়। গাছ আলু আবাদ করতে খরচ কম। একই মাচায় অন্য একটি সাথি ফসলের (চালকুমড়া, ঝিঙা বা চিচিঙ্গা) সঙ্গে গাছ আলু আবাদ করা যায়।
সম্প্রতি উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের লাউতলী এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, মাচায় উঠিয়ে দেওয়া ‘গাছ আলু’ লতার মতো আঁকাবাঁকা হয়ে এক মাচা থেকে অন্য মাচায় ছড়িয়ে আছে। এই গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, এই আলু চাষে বাড়তি তেমন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তাই তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে গাছ আলু চাষ করেছেন। আশা করছেন, এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে ১২০ মণ আলু পাবেন। গত বছর একই জমিতে গাছ আলু চাষ করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন।
কৃষক আসাদ মিয়া বলেন, ‘গাছ আলু চাষ করে আমার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এ বছর প্রায় এক একর জমিতে গাছ আলু চাষ করেছি। আমার ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে আমার জমি থেকে এক লাখ টাকার ওপরে লাভ করেছি। একবার মাচা করলে আর যত্ন লাগে না। চাষে খরচ কম, কীটনাশক লাগে না, শ্রমিকও লাগে না। এই গাছ আলুতে লাভ বেশি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই আলম বলেন, চলতি মৌসুমে পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৪০২ হেক্টর জমিতে গাছ আলুর চাষ হয়েছে। এটি দেশের অন্য জায়গার তুলনায় বেশি। কৃষকেরা এই সবজি সাথি ফসল হিসেবে জমিতে চাষ করে থাকেন। মার্চ-এপ্রিল মাসে কুমড়াজাতীয় সবজির সঙ্গে এই আলুর চাষ করা যায়। আগস্ট থেকে শুরু করে নভেম্বর পর্যন্ত ফসল তোলা যায়। এ আলু চাষে রোগবালাই কম থাকায় খরচও কম হয়। তাই দিনদিন এ আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।