রোবট, সৌরশক্তির ব্যবহার, ভূমিকম্প অ্যালার্ম যন্ত্র, কী নেই রাজশাহীর বিজ্ঞান মেলায়

রাজশাহীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় নিজেদের তৈরি করা রোবট দেখাচ্ছে দুই শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের চৌদ্দপায় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গাড়ি চালাতে গিয়ে যদি চালক ঘুমিয়ে পড়েন, তাঁকে সজাগ তুলবে এক রোবট। আবার একজন অন্ধ মানুষের পথপ্রদর্শক হয়ে কাজ করবে আরেকটি রোবট। রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্পপ্রযুক্তি মেলায় একটি স্টলে এ দুটি রোবট দেখা গেল। এই দুটি রোবট তৈরি করেছে রাজশাহীর মাসকাটাদিঘী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী মো. সামিউল খান ও মো. মাহফুজুর রহমান। তারা স্টলে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীদের তাদের রোবট প্রকল্পের খুঁটিনাটি বোঝাচ্ছিল। তাদের বানানো রোবট দুটি দেখতে স্টলে ভিড় করছেন অনেকেই।

আরেকটি স্টলে দেখা গেল ‘সোলার ড্রিপ ইরিগেশন’ প্রকল্প। রাজশাহী লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী আফসানা জাহান, নুজহাত তাবাসুম ও নুসরাত জাহান দর্শনার্থীদের বর্ণনা দিচ্ছিল, কীভাবে কৃষক সোলার প্যানেল ব্যবহার করে খেতে সহজেই সেচ দিতে পারেন। এই তিন শিক্ষার্থী বলছে, সৌরশক্তি ব্যবহার করে সেচ দিতে পারলে সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে এটি পরিবেশের জন্য ভালো।

আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে তিন দিনব্যাপী বিজ্ঞান ও শিল্পপ্রযুক্তি মেলা শুরু হয়েছে। এই মেলার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) রাজশাহী। মেলা চলবে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

প্রধান অতিথি হিসেবে দুপুরে মেলার উদ্বোধন করেন বিসিএসআইআরের সদস্য (প্রশাসন) ও যুগ্ম সচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিসিএসআইআরের গবেষণা সমন্বয়কারী মো. নূরুল হুদা ভূঁইয়া। স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহী গবেষণাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. বাদরুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বিসিএসআইআর রাজশাহী গবেষণাগারের পরিচালক মো. সেলিম খান।

রাজশাহীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় এক শিক্ষার্থী তার প্রকল্প দেখাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের চৌদ্দপায় এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

প্রধান অতিথি ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে অভিনব প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকশিত হবে এবং বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে অসামান্য ভূমিকা রাখবে। আজকের খুদে বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করবে।

নূরুল হুদা ভূঁইয়া বলেন, এ ধরনের মেলা বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের জন্য সহায়ক। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কোনো বিকল্প নেই।

সেলিম খান বলেন, এ মেলার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানসচেতনতা বাড়ানো। জনগণের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে গড়ে তোলা। শিক্ষার্থীরা যে নতুন নতুন চিন্তা ও উদ্ভাবন নিয়ে এসেছে, তা নিয়ে কাজ করবেন তাঁরা।

আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, এ মেলায় রাজশাহী অঞ্চলের স্কুল-কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের ৪৯টি স্টল রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ভাবন নিয়ে তিনটি গ্রুপে (বিভাগে) এই মেলায় অংশ নিয়েছে। ‘এ’ গ্রুপে অংশ নিয়েছে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি; ‘বি’ গ্রুপে নবম-দশম শ্রেণি এবং ‘সি’ গ্রুপে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আছে। মেলার শেষ দিনে স্টল মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্টলকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়া হবে।

রাজশাহীতে তিন দিনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা শুরু হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ৪৯টি স্টল রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরের চৌদ্দপায় এলাকায়
ছবি : প্রথম আলো

মেলা উদ্বোধনের পর বিসিএসআইআর প্রাঙ্গণে ভিড় লেগে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান প্রজেক্ট দেখতে ভিড় জমিয়েছে। মেলায় পরিবেশ রক্ষাকারী বিভিন্ন প্রযুক্তির বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বেশি প্রজেক্ট করেছে শিক্ষার্থীরা।

‘ভূমিকম্প অ্যালার্ম যন্ত্র’ নিয়ে এসেছে রাজশাহী মাদার বখশ্ অর্থনীতি কলেজের তিন শিক্ষার্থী রোদেলা ইসলাম, মোসা. বিনতি ও সুরাইয়া আক্তার। যন্ত্রটি বানাতে তাদের মাত্র ১০০ টাকা খরচ হয়েছে। তারা বলছে, ভূমিকম্প হলেই যন্ত্রটি অ্যালার্ম দেওয়া শুরু করবে। এতে করে মানুষ সতর্ক হয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে পারবে। তারা যন্ত্রটির কার্যকারিতাও দর্শনার্থীদের দেখাচ্ছিল। যন্ত্রটি চেয়ারের ওপরে বসিয়ে চেয়ার নড়াতেই যন্ত্রটি বেজে উঠছে। এই শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এটি তৈরি করতে একটি ব্যাটারির সঙ্গে তাদের কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্র কিনতে হয়েছে। কোনো ধরনের কম্পন হলেই যন্ত্রটি অ্যালার্ম দেওয়া শুরু করে। এতে করে ভূমিকম্প শুরু হলেই মানুষ সতর্ক হয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে পারবে।

একটি স্টলে দেখা গেল কয়েকজন শিক্ষার্থীর ‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্প। তারা দেখাচ্ছিল একটি স্মার্ট শহরে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, জলাধার, সবুজায়ন, আবাসিক এলাকা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবস্থাপনা কেমন হবে।

প্যারামাউন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী নুসরাত জামান, সামিহা রহমান এবং সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অপূর্ব পান্ডে মিলে ‘ইফিশিয়েন্ট রোড সিস্টেম’ প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে। তারা জানায়, শহরের ফুটপাত পথচারীদের হাঁটা বা রাস্তায় গাড়ি চলাচলের ফলে যে চাপ তৈরি হয়, সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হতে পারে। তাদের প্রকল্পে দেখানো হয়েছে শহরের মধ্যে কীভাবে পানি বেশি করে ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারে। এ জন্য তারা একটি বিশেষ ধরনের প্লট তৈরি করেছে।

একটি বিদ্যালয়ের কেজি শ্রেণির খুদে শিক্ষার্থী এস এম জারিফ জাওয়াদও অংশ নিয়েছে মেলায়। সে লেবুর সাহায্যে লাইট জ্বালিয়ে দেখাচ্ছিল দর্শনার্থীদের।