ভোগান্তি এড়াতে আগেই বাড়ি ফিরছে মানুষ

ভোগান্তি এড়াতে ঈদের ছুটি শুরুর আগেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। রোববার বেলা ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া তিন নম্বর ফেরিঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পবিত্র ঈদুল আজহার আরও চার দিন বাকি। আনুষ্ঠানিক ছুটি এখনো শুরু হয়নি। তবে ভোগান্তি এড়াতে ঢাকা থেকে মানুষজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। এতে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ঘরমুখী মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। তবে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় দুর্ভোগ ছাড়াই মানুষজন মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এবং মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথ পার হতে পারছেন।

রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটে এ চিত্র দেখা গেছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী বাস ও যাত্রী পারাপার করছে ফেরি কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ঘাট দুটিতে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাকের কিছুটা জট চোখে পড়েছে।

এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রী ও যানবাহনের জন্য পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৮টি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ৫টি ফেরি চলাচল করছে।

গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে লালন পরিবহনের একটি বাসে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন ইলিয়াস (৪০)। পাটুরিয়ার ৩ নম্বর ঘাটে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তাঘাটে যানজট ও পাটুরিয়ার ভোগান্তি এড়াতে আগেই বাড়ি যাচ্ছি। গরমের মধ্যে ভোগান্তি আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে।’

মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট এলাকায় যাত্রী এবং কোরবানির পশুবাহী গাড়ি আগে পার করায় সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ পড়েছে। রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

এদিকে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাসেও অনেকে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। এসব ব্যক্তিগত গাড়ি পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে এসে সরাসরি ফেরিতে উঠে যাচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মোহাম্মদ খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যানবাহনের চাপ অনেক কমেছে। তবে কোরবানির পশুবাহী গাড়ির চাপ রয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক ফেরি থাকায় এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখী মানুষের কোনো ভোগান্তি পোহাতে হবে না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে তীব্র স্রোত রয়েছে। এ কারণে স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় বর্তমানে নৌপথে ফেরি পারাপারে ১০ মিনিট সময় বেশি লাগছে। এ ছাড়া নদীতে পানি বাড়ায় পাটুরিয়া ও আরিচায় সবগুলো ঘাটের পন্টুন মধ্যম স্তরে ওঠানো হয়েছে।

এদিকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানও পারাপার করা হচ্ছে। পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে এসব কোরবানির পশুবাহী গাড়ি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ হয়ে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার হাটে নেওয়া হচ্ছে। আবার হাটে পশুগুলো পৌঁছে দিয়ে খালি গাড়িগুলো পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে।

আজ সকালে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীবাহী বাসের চাপ কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। পর্যাপ্তসংখ্যক ফেরি থাকায় আধা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে যাত্রীবাহী বাসগুলো ফেরিতে ওঠে পড়ছে। তবে পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনাল ও আরিচা ঘাট এলাকায় সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ দেখা গেছে। এসব যানবাহনকে নদী পারাপারের জন্য দীর্ঘ সময় ঘাট এলাকায় আটকে থাকতে হচ্ছে।

এদিকে ঘাট এলাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে ও পরে যাত্রীদের নিরাপত্তায় ঘাট এলাকায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ঘাট এলাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। ঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরপরও কেউ চাঁদাবাজি করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘাটে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও স্বস্তিদায়ক করতে জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন মাঠে কাজ শুরু করেছে।