নবগঙ্গা নদীর জায়গা দখল করে কাটা হয়েছে পুকুর 

নদীতে এক্সকাভেটর দিয়ে রাতের আঁধারে দ্রুত একের পর এক পুকুর কাটা হলে একসময় নদীই হারিয়ে যাবে।

নবগঙ্গা নদীর জায়গা দখল করে খনন করা পুকুর। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়নের গিলাবাড়িয়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহে নবগঙ্গা নদীর জায়গা দখল করে মাছ চাষের জন্য পুকুর কাটা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি পুকুর কাটা সম্পন্ন হয়েছে। নদীর মধ্যে ওই পুকুরের মাছ যাতে বেরিয়ে যেতে না পারে, এ জন্য পাড় মাটি দিয়ে উঁচু করা হয়েছে। আরেকটি পুকুর কাটার কাজ চলছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, জিল্লুর রহমান নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি নদী দখল করে এভাবে পুকুর কেটেছেন। পাশাপাশি পুকুরের পাশে নদীর জায়গা দখল করে চাষযোগ্য জমিও তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। নদীতে এক্সকাভেটর দিয়ে রাতের আঁধারে দ্রুত একের পর এক পুকুর কাটা হলে একসময় নদীই হারিয়ে যাবে।

যে স্থানে পুকুর কাটা হচ্ছে, সেখানে নবগঙ্গা নদীর এক পাশে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের পার-মথুরাপুর গ্রাম। আরেক পাশে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়নের গিলাবাড়িয়া গ্রাম। দখলকারী জিল্লুর রহমান পার-মথুরাপুরের বাসিন্দা। নদীর গিলাবাড়িয়া অংশে পুকুর কাটা সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে পার-মথুরাপুরে পুকুর কাটার কাজ চলছে। 

চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে শাখা হয়ে আসা নবগঙ্গা নদী ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় প্রবেশ করে ঝিনাইদহ শহর হয়ে মাগুরায় প্রবেশ করেছে। সম্প্রতি সরেজমিনে এই নদীর হরিণাকুণ্ডু উপজেলার গিলাবাড়িয়া এলাকায় নদীর মধ্যে পুকুর কাটার সত্যতা মিলেছে। অন্যবার বর্ষার সময় নদীতে পানি থাকলেও এবার এখনো নদীতে পানি আসেনি। শুষ্ক নদীর অনেকটাজুড়ে মাটি ফেলে চাষযোগ্য জমিতে পরিণত করা হয়েছে। যে জায়গাটা ঘাস জন্মে চারণভূমির মতো দেখতে হয়েছে। এই স্থানের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঝিনাইদহ-হরিণাকুণ্ডু আঞ্চলিক মহাসড়ক।

গিলাবাড়িয়া গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জিল্লুর রহমান যে স্থানে পুকুর কাটছেন, সেখানে নদীর পাড়ে তাঁর চাষযোগ্য জমি রয়েছে। এই নদীর ওপরে সমতলে তাঁর জমি থাকায় নিচে নদীর অনেকটা জায়গা দখল করে চাষযোগ্য করে নিয়েছেন। এবার তিনি নদীর মধ্যেই পুকুর কাটছেন। একটি পুকুর কেটেছেন গিলাবাড়িয়া এলাকায়, আরেকটি কাটতে শুরু করেছেন পার-মথুরাপুর এলাকায়। ২০ থেকে ২৫ দিন পূর্বে এক্সকাভেটর যন্ত্র দিয়ে পুকুরটি খনন করেন জিল্লুর রহমান। বড় পুকুরটি তৈরির পর এক্সকাভেটর লাগিয়ে নদীর মধ্যেই ছোট আরেকটি পুকুর তৈরির কাজ শুরু করেন। বর্তমানে সেটি বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জিল্লুর রহমানদের পরিবার এলাকায় প্রতিপত্তিশালী ও প্রভাবশালী। যে কারণে লোকজন সেভাবে প্রতিবাদ করতে পারেননি। তবে গোপনে প্রশাসনকে জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা জামিনুর রহমান বলেন, যেভাবে পুকুর কাটা হয়েছে, তাতে বর্ষা মৌসুমে পানির স্রোত বাধাগ্রস্ত হবে। তা ছাড়া নদীর জায়গাটি বেদখল হয়ে যাবে। এভাবে নদীর জায়গা দখল করে পুকুর কাটা বেআইনি হলেও জিল্লুর রহমানরা দখল করে চলেছেন। তাঁরা প্রথমে নদীর পাড়, পরে নদীর তলদেশ দখল করে নিচ্ছেন। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জিল্লুর রহমান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, যে স্থানে পুকুর কেটেছেন, সেটা তাঁদের জমি। পুকুরের পাড় কিছুটা নদীর মধ্যে থাকলে থাকতে পারে। পুকুরের চারপাশের নদীর জায়গায় চাষের জমির প্রসঙ্গে বলেন, ওটাও তাঁদের নিজেদের জায়গা। এ রকম অনেকের জায়গা আছে। বছরে এখানে একটি ফসল হয়, বাকি সময় পানি উঠে যায়। পানি নেমে গেলে তাঁরা আবারও চাষাবাদ শুরু করেন। অপর পুকুরটির বিষয় তিনি জানান, ওই স্থানে পানি ধরে রাখার জন্য গর্ত খুঁড়েছেন। পুকুর কাটেননি বলে জানান।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন মুঠোফোনে জানান, নদীর জায়গা দখল করে পুকুর খনন করা যাবে না। বিষয়টি তিনি এখন পর্যন্ত অবগত নন। স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে বিষয়টি খোঁজখবর নেবেন। কেউ এভাবে নদীর মধ্যে পুকুর কাটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।