মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে বিএনপি নিরলসভাবে কাজ করেছে: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়ে নিজে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। আবার দেশ পরিচালনায়ও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মানুষকে সংগঠিত করে কীভাবে দেশ গঠন ও পরিচালনা করতে হয়, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করাও এই ইমানের মধ্যে পড়ে। আমরা দেখেছি, ৭১ সালে একটা দল মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে দেশ ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে গিয়েছিল। আরেকটি দল মহান মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বিএনপি এমন একটি দল, যারা মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করেছে।’
আজ বুধবার বিকেলে বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির আয়োজনে ঝিনাইদহ, যশোর ও নড়াইল জেলায় বিএনপির কর্মশালায় ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এ কথা বলেন তারেক রহমান। ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ওই তিন জেলার নেতারা অংশ নেন। ঝিনাইদহের কর্মশালা হয় শহরের জোহান ড্রিম ভ্যালি মিলনায়তনে। যশোরের প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয় শহরের চারখাম্বা মোড়ে হোটেল ওরিয়েন্ট প্রাঙ্গণে। নড়াইলের প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয় সদর উপজেলার সীমাখালী এলাকার চিত্রা রিসোর্টে।
তারেক রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। পুরো জাতি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে হলে আমাদের সব নেতা-কর্মীকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। প্রতিবারই বলছি সামনের পথ মোটেও মসৃণ নয়। বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতা-কর্মীদের এক থাকতে হবে। বিএনপির নেতা-কর্মীকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও গত ১৬ বছর গুম খুনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাঁরা আন্দোলন সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন তাঁদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। আমরা বিগত দিনগুলোয় দলীয়ভাবে এসব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজ করার চেষ্টা করব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে নিজ নিজ এলাকার সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, ৫ শতাংশের বেশি কোটা থাকা উচিত নয়। ফ্যাসিস্ট সরকার কোটাপ্রথার লাগামহীন ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোয় দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়েছিল। বিএনপি সেটা করবে না। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে চাকরি প্রদান করা হবে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘দেশে যখনই নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে তখনই বিএনপি দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে। জনগণ ক্ষমতায় বসিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথম যে পদক্ষেপ, সেটা হলো নির্বাচন। সেই নির্বাচনে দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবেন, তাঁরা কাদেরকে দেশের দায়িত্ব দেবেন। ৩১ দফার মাধ্যমে আমরা দেশে পরিবর্তন ঘটাতে চাই, যেটা মানুষ প্রত্যাশা করে। আর এই পরিবর্তনটি কোন ম্যাজিক বা জাদু নয় যে আমরা বলব আর হয়ে যাবে। এই পরিবর্তনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অপ্রয়োজনীয় খরচ যদি কমানো যায়, দুর্নীতি রোধ করা গেলে বেকার ভাতাসহ অন্যান্য খাতে ভাতা ব্যবস্থা চালু ও ভাতা বৃদ্ধির করা সম্ভব। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করব।’
ঝিনাইদহে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মুন্সি কামাল আজাদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক মোরশেদ হাসান খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য মীর মো. হেলাল উদ্দিন, মো. আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, ফারজানা শারমিন, সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ, ঝিনাইদহ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
যশোরে কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস বেগম। কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জাবিউল্লাহ, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেন, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার, কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবীবা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান, ইকবাল হোসেন শ্যামল ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক প্রমুখ।
নড়াইলে কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম। উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সহসম্পাদক শাম্মী আক্তার, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক নেওয়াজ হালিমা, সহগণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম, নড়াইল জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানুজ্জামান, কালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি স ম ওয়াহিদুজ্জামান, জেলা যুবদলের সভাপতি মশিয়ার রহমান প্রমুখ।