মায়ের ছিন্নভিন্ন লাশের পাশেই কাঁদছিল শিশুটি
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে একটি বাসে গাজীপুরের টঙ্গীতে ফিরছিলেন এক নারী। সঙ্গে ছিল তাঁর এক বছর বয়সী কন্যাশিশু। বাসটি টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় বিআরটির উড়ালপথে ওই নারীকে নামিয়ে দেয়। উড়ালপথ থেকে নিচের সড়কে নামতে শিশুটিকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন ওই নারী। হঠাৎ পেছন থেকে আসা একটি গাড়ির চাপায় তিনি নিহত হন। কিন্তু কোল থেকে ছিটকে পড়া শিশুটি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্টেশন রোড এলাকায় বিআরটির (বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প) উড়ালপথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। ওই নারীর লাশ পাঠানো হয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত নারী ও শিশুটির পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে ‘ইমাম’ পরিবহনের একটি বাসে ফিরছিলেন। বাসটি টঙ্গীর চেরাগ আলী থেকে উড়ালপথে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। এর মধ্যে স্টেশন রোড এলাকায় (রাস্তার পূর্ব পাশে) শিশুটিকে কোলে নিয়ে ওই নারী বাস থেকে নামেন। পাশেই উড়ালপথে ওঠা–নামার বিআরটি স্টেশন (অসম্পন্ন, চালু হয়নি)। ওই নারী নিচের সড়কে নামতে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এর মধ্যে হঠাৎ পেছন থেকে একটি গাড়ি এসে তাঁদের চাপা দেয়। শিশুটি কোল থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে। গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই ওই নারী মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ও নিহত নারীর লাশ মর্গে পাঠায়।
টঙ্গী পূর্ব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, শিশুটি রাস্তার পাশে বসে আছে। পাশেই পড়ে আছে তার মায়ের ছিন্নভিন্ন লাশ। শিশুটি অনবরত কাঁদছিল। আমরা দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে শহীদ আহ্সান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসক শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার মাথা ও ঠোঁটে কিছুটা আঘাত আছে। তবে গুরুতর নয়। তার মায়ের লাশ উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।’
এসআই মোস্তফা কামাল বলেন, পুলিশ এখনো ওই নারী বা শিশুটির পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি। তাঁদের সঙ্গে ইমাম পরিবহন নামের একটি বাসের টিকিট পাওয়া গেছে। সেখানে বাসে ওঠার স্থান ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট লেখা। পুলিশ পরিচয় নিশ্চিত হতে বাসটির কাউন্টারেও যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু সেখানকার লোকেরা কেউ ওই নারীর পরিচয় বলতে পারছেন না। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত গাড়িটিও শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরার হাউসবিল্ডিং থেকে শুরু হয়ে উড়ালপথটি টঙ্গীর কলেজগেট এলাকায় শেষে হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে চেরাগ আলী, মিলগেট, স্টেশন রোড, টঙ্গী বাজার, আবদুল্লাহপুর, হাউসবিল্ডিংসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টপেজ। কিন্তু স্টপেজগুলোর ব্যবহার বা উড়ালপথে ওঠা–নামার জন্য এখনো এলিভেটেড স্টেশনগুলো চালু হয়নি। এরপরও অধিকাংশ বাস উড়ালপথ ব্যবহার করছে। যাত্রীদের যততত্র নামিয়ে দিচ্ছে। এতে যাত্রীদের হেঁটে কাঙ্ক্ষিত স্টপেজে যেতে হচ্ছে। রাস্তা পারাপারেও ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।