এত ছোট বয়সে মা–বাবা ও ভাইকে হারানোর শোক কীভাবে সইবে মেয়েটি
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম সোহেল (৩২)। স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে নতুন বাসায় ওঠার কথা ছিল। কিন্তু নতুন বাসায় আর ওঠা হলো না তাঁদের। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ধরমোকাম এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী, ছেলেসহ তিনি মারা যান। নানাবাড়িতে থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছে একই পরিবারের ৯ বছর বয়সী সহি। এত ছোট বয়সে মা–বাবা ও ভাইকে হারিয়ে মেয়েটি কীভাবে শোক সইবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বজনেরা।
আজ শুক্রবার সকালে রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের বাঁশাইল গ্রামের কাজীপুর পাড়ায় নিহত আরিফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিহত আরিফুলের দুই বোন হোসনেয়ারা ও গোলাপ বানু আহাজারি করছেন।
নিহত আরিফুল ইসলাম রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের বাঁশাইল গ্রামের কাজীপুর পাড়া এলাকার মৃত ওছিউজ্জামানের ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। আরিফুল ইসলামরা চার ভাই ও দুই বোন। তাঁদের চাচাতো ভাই কৃষক আবু সাঈদ বলেন, প্রায় ১৮ বছর আগে নদীভাঙনে সবকিছু হারিয়ে আরিফুল ইসলামের বাবা এই গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তাঁরা চার ভাই পড়ালেখা শেষ করে চাকরি শুরু করেন। আরিফুল সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন।
নিহত আরিফুলের বড় ভাই ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ল্যান্স করপোরাল পদে উন্নীত হয়ে আমার ভাই গত বছর মিশনে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ছিল। এক বছরের কর্মকাল শেষ করে গত রোজার ঈদে দেশে ফিরে আসে। গত পরশু ছুটিতে শ্বশুরবাড়ি শেরপুরে যায়। সেখান থেকে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়। বাড়ি থেকে ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে নতুন বাসায় ওঠার কথা ছিল। কিন্তু পথেই সব শেষ হয়ে গেল।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে উপজেলার ধড়মোকাম এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে ট্রাক ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন আরিফুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী মৌসুমী আক্তার (২৫) ও ছেলে সাওম (৪)। মৌসুমীর বাবার বাড়ি শেরপুরের খন্দকারটোলা গ্রামে। সেখান থেকে অটোরিকশায় স্বামী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি রায়গঞ্জে যাচ্ছিলেন তিনি। নিহত অন্যজন হলেন অটোরিকশার চালক সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সিলন গ্রামের বাসিন্দা মো. নাসিম (৩২)।
আরিফুল ইসলামের বড় ভাইয়ের ছেলে আসিফ ইকবাল ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আসিফ বলেন, চাচার বড় মেয়ে ৯ বছরের সহি শেরপুরে নানার বাড়ি থেকে পড়ালেখা করে। ওই দিন সহি মা–বাবার সঙ্গে ছিল না। ফলে বেঁচে গেছে সে। কিন্তু এত ছোট বয়সে মা–বাবা ও ভাইকে হারানোর শোক কীভাবে সে সামাল দেবে?
একসঙ্গে একই পরিবারে তিনজনের মৃত্যুর খবর শোনার পর পাড়ার লোকজন শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন বলে জানান সোনাখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আসাদ আলী সরকার।
রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, ‘আমার চাচাশ্বশুরের ছোট ছেলে সেনাসদস্য আরিফুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের।’