গ্যাস–সংকট, চরম ভোগান্তি

স্থানীয় ব্যক্তিদের মতে, এখানে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৮-১০ হাজার গ্রাহক আছেন। গ্রাহকেরা গ্যাস-সংকটে চরম ভোগান্তিতে আছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় এবার শীতের শুরুতেই গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে এখানে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত গ্যাস-সংকট থাকে। তবে এবার অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে দেখা দিয়েছে গ্যাস-সংকট। গ্যাসের চুলার ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোতে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়। শুরুর দিকে এখানে গ্রাহক ছিলেন প্রায় এক হাজার। বর্তমানে কাগজে-কলমে সরাইল উপজেলা সদরে গ্রাহকের সংখ্যা পাঁচ হাজার। তবে স্থানীয় ব্যক্তিদের মতে, এখানে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার গ্রাহক আছেন। গ্রাহকেরা গ্যাস-সংকটে চরম ভোগান্তিতে আছেন।

সরাইল উপজেলা সদরে দেড় কিলোমিটার এলাকায় ছয় ইঞ্চি এবং এক কিলোমিটার এলাকায় চার ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে গ্যাস সঞ্চালন লাইন টানা হয়েছে। এরপর পাড়ায় পাড়ায় দুই ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ বসানো হয়েছে। স্থানীয় সামাজিক সংগঠন হৃদয়ে সরাইলের সভাপতি সমাজকর্মী ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাতটায় শুরু হয়ে বেলা একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত চুলা মিটিমিটি জ্বলে। আবার বিকেল চারটার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একই পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই সময়ের মধ্যে গ্যাসের চুলায় তেমন কিছু রান্না করা যায় না।

উপজেলা সদরের বড় দেওয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব খান প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাতটার পর থেকে বেলা একটা পর্যন্ত গ্যাসের চুলায় টিপটিপ করে আগুন জ্বলে। এখানে বৈধ গ্রাহকের তুলনায় অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যাই বেশি, যার কারণে এমনটি হচ্ছে।

বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, দেশে গ্যাসের সংকট আছে। শীতকালে গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়ে। অন্যদিকে গ্যাসের অবৈধ সংযোগও রয়েছে। সরাইলে পাঁচ হাজারের মতো বৈধ সংযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে অবৈধ সংযোগও আছে। লোকবলের অভাবসহ নানা সংকটে তাঁদের পুরোপুরি তদারক করা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁরা দিনের বেলা অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে আসেন। পরে রাজনৈতিক নেতাদের সমর্থন নিয়ে তাঁরা রাতের আঁধারে আবার অবৈধ সংযোগ নেন।

গ্যাসের অবৈধ সংযোগকারীদের সঙ্গে একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ আছে, এমন অভিযোগের বিষয়ে ডিজিএম মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, এসব অসাধু চক্রের সঙ্গে তাঁদের কোনো কর্মকর্তা জড়িত নন। ২০১৬ সালে সরকার গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করে দিলেও ঠিকাদারের কাছে সব সরঞ্জাম রয়ে গেছে।

আবাসিক গ্যাস-সংযোগের একজন প্রবীণ ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ২০১৬ সাল থেকে আবাসিক গ্যাস-সংযোগ বন্ধ রেখেছে। অথচ এরপরও সরাইলে অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও ঠিকাদার শত শত গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ দিয়েছেন, এখনো দিচ্ছেন। এখানে গ্যাসের বৈধ গ্রাহকের তুলনায় অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যাই বেশি। অবৈধ গ্রাহকের চাপে বৈধ গ্রাহকেরা আছেন বিপাকে। আর অবৈধ গ্রাহকেরা আছেন আতঙ্কে।