অনিয়মের অভিযোগে কামিল মাদ্রাসার দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত

চুয়াডাঙ্গা জেলার মানচিত্র

চুয়াডাঙ্গা কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসার ইসলামের ইতিহাসে সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিন ও কৃষিশিক্ষার সহকারী শিক্ষক ওয়াহিদ মোহা. রাশেদীন আমীনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষের সঙ্গে অসদাচরণ ও অশ্লীল গালাগাল, সভাপতির সই জাল করে মাদ্রাসা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো, সহকর্মী শিক্ষকদের মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি, অনৈতিক কাজসহ বিভিন্ন অভিযোগে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ।

পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দারের ১৯ মার্চ স্বাক্ষরিত সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি ২০ মার্চ ওই দুই শিক্ষকের হাতে পৌঁছায়। এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভায় অভিযোগ পর্যালোচনা শেষে সর্বসম্মতক্রমে তাঁদের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময় দুজনকেই বিধি অনুযায়ী তাঁদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা দেওয়া হবে।

সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনকে বরখাস্তের চিঠি থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি (রুহুল আমিন) মাদ্রাসার নিয়মশৃঙ্খলা অমান্য করাসহ প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে আসছেন। এ বিষয়ে বারবার মৌখিকভাবে সতর্ক করার পরও তিনি শোধরাননি। ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ এবং শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার বিরোধিতা করে অধ্যক্ষের সঙ্গে অসদাচরণ ও অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। এ সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক আবুল হাশেম এবং গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞানের প্রভাষক মাসুদুর রহমান প্রতিবাদ করলে তাঁদের দুজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় দুই দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পরিচালনা পর্ষদের সভায় সন্তোষজনক মনে হয়নি। এ জন্য তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রুহুল আমিন বলেন, ‘২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ওয়াহেদ মোহা. রাশেদীন আমীন অধ্যক্ষের সঙ্গে একটি বিষয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে সহকারী অধ্যাপক আবুল হাশেমের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন। আমি বাইরে থেকে ঠেকাতে গিয়ে এখন চিপায় পড়ে গেছি।’

সহকারী শিক্ষক ওয়াহিদ মোহা. রাশেদীন আমীনের বিরুদ্ধে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে বেতন নবম গ্রেড থেকে অষ্টম গ্রেড করতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর নতুন কারিকুলাম (বিষয়ভিত্তিক) নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের প্রশিক্ষণ চলাকালীন নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া এবং তা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় দফায় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব না দিয়ে পরিচালনা পরিষদকে তিনি (রাশেদীন আমীন) অবজ্ঞা করেছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের সভায় পর্যালোচনা শেষে সর্বসম্মতক্রমে দুই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

ওয়াহেদ মোহা. রাশেদীন আমীন বলেন, ‘৯ সেপ্টেম্বর আলিম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা ছিল। আলিম পরীক্ষা চলাকালে দাখিলসহ নিচের সব শ্রেণির পাঠদান বন্ধের নির্দেশনা থাকলে অধ্যক্ষ তা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যা নিয়ে অধ্যক্ষ মীর মুহাম্মদ জান্নাত আলীর কাছে জানতে চাইলে সহকারী অধ্যাপক আবুল হাশেম অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই দিন মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। জাল স্বাক্ষর ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও সঠিক নয়। এ নিয়ে সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনকেও অহেতুক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’

মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মীর মুহাম্মদ জান্নাত আলী বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই শিক্ষককে চূড়ান্ত বহিষ্কারের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিত জানানো হবে। এ ব্যাপারে পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’