আখাউড়ায় ডেকে নিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তরুণের স্বীকারোক্তি

হত্যা
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় পাওনা টাকার জের ধরে বাড়িতে ডেকে নিয়ে দুই পায় শিকল দিয়ে বেঁধে, গলায় গামছা পেঁচিয়ে মো. মোরসালিন (২৬) নামের এক তরুণকে শ্বাস রোধ করে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এক আসামি। আজ সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সামিউল আলম আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন।

গত রোববার বিকেলে উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের দেনাদার আবদুল্লাহর তালাবদ্ধ বসতঘর থেকে মোরসালিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত যুবকের পরিবারের অভিযোগ, আবদুল্লাহ নামক পরিচিত ব্যক্তির কাছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পেতেন মোরসালিন। আবদুল্লাহ তাঁর বাড়িতে মোরসালিনকে ডেকে নিয়ে কয়েকজনের সহায়তায় শ্বাস রোধ করে হত্যা করে।

নিহত মোরসালিন উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের মিনারকুট গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে। আজ দুপুরে আটকের পর আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন উপজেলার শিবনগর গ্রামের সোহরাব মিয়া (২০)। আর প্রধান অভিযুক্ত মো. আবদুল্লাহ উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে পরিবারসহ তিনি পলাতক।

নিহত ব্যক্তির পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার সকাল থেকে শিবনগর গ্রামে আবদুল্লাহর বাড়িটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। বিকেল পর্যন্ত তালাবদ্ধ দেখে অনেকের সন্দেহ হয়। পরে স্থানীয় লোকজন আখাউড়া থানা-পুলিশকে খবর দেন। বিকেলে আবদুল্লাহর বসতঘরের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বস্তায় বাঁধা অবস্থায় মোরসালিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

আজ সোমবার সকালে নিহত ব্যক্তির বড় ভাই হাকিম ভূইয়া বাদী হয়ে আবদুল্লাহ, হৃদয়, সোহেল ও রিফাতসহ আটজনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। বেলা দুইটার দিকে এ মামলায় শিবনগর গ্রাম থেকে সোহরাব নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় পুলিশ কাছে স্বীকার করেছেন সোহবার। এ ছাড়া বিকেল পাঁচটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সামিউল একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

সোহরাবের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, সোহরাবসহ মোট ছয়জন মিলে মোরসালিনকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছেন বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন। গত শনিবার রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা মোরসালিনকে ডেকে আবদুল্লাহর বসতবাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে সোহরাব ও আবদুল্লাহসহ উপস্থিত আরও চার আসামির সঙ্গে মোরসালিনের পাওনা টাকা নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। তাঁরা সেখানে মোরসালিনকে মারধরও করেন। একপর্যায়ে দুই আসামি মোরসালিনের দুই পায়ে শিকল দিয়ে বাঁধেন। অপর আসামিরা কেউ দুই হাত এবং বাকিরা গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে মোরসালিনকে হত্যা করেন। পরে তাঁর লাশ বস্তায় ভরে বেঁধে বসতঘর তালাবদ্ধ করে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নিহত মোরসালিন ও অভিযুক্ত আবদুল্লাহ দুজনই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। মাদক নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে। তবে মোরসালিনের ভাই রায়হান ভূইয়া বলেন, ‘উপজেলার শিবনগর গ্রামের আবদুল্লাহ ও হৃদয় মিয়ার কাছে আমার ভাইয়ের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাওনা ছিল। শনিবার দুপুরে ভাই আমাকে কাগজে পাওনা টাকার হিসাবটি লিখে দিতে বলেছিল। আমার ভাই পোলট্রি মুরগির ব্যবসা করতেন, কিন্তু পাওনা টাকার জের ধরে আবদুল্লাহ আমার ভাইকে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে।’

আখাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরে আবদুল্লাহর বসতঘরের তালা ভেঙে বস্তায় বাঁধা অবস্থায় মোরসালিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তির গলায় কালো দাগ রয়েছে। আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে ১১টি মাদক এবং পুলিশকে মারধর ও আহত করার ঘটনায় আরও পাঁচটিসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। আর মোরসালিনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে চারটি মামলা রয়েছে।