ফেসবুকে দেখে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ধার, দেশে ফিরলেন মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ

বাবা হালিম উদ্দিনের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া মঞ্জুরুল হক। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর ১ বিজিবি ব্যাটেলিয়ন সদর দপ্তরেছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহয়ের ধোবাউরা উপজেলার হাজংপাড়া গ্রাম। এ গ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ মঞ্জুরুল হক (২২) এক বছর আগে নিখোঁজ হন। ওই গ্রামের সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয়ের তুরাং এলাকা। তবে মঞ্জুরুলকে পাওয়া গেছে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার মুক্তারপুর এলাকায়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীতে বাবার হাতে মঞ্জুরুলকে তুলে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

হালিম উদ্দিন ও মিনা খাতুন দম্পতির ছেলে মঞ্জুরুল হক। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। গতকাল ছেলেকে নিতে রাজশাহীতে ১ বিজিবি ব্যাটেলিয়ন সদর দপ্তরে এসেছিলেন হালিম উদ্দিন ও তাঁর চাচাতো ভাই ডালিম আলী।

গতবছর রমজান মাসে গ্রাম থেকে মঞ্জুরুল নিখোঁজ হন। এ সম্পর্কে হালিম উদ্দিন তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, ‘সাতটার সময় হারাইছি। সাথে সাথে বারাইছি। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাইছি না। বাড়িত থেইক্যা বর্ডার পনযোন্ত খোঁজাখুঁজি কইরা পাইছি না। মাইনষে বলছিল কবিরাজ ধরো। পরে কবিরাজ ধরসি। কবিরাজ ধরলে কয় ডে ডাহা গেছে গা। এইহানে গেছে গা, ওইহানে গেছে গা। তাবিজ দিলে, সুলা দিলে আইব। কিন্তু ছেলে তো আর আসে না।’

হালিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘ছেলের যহুন ১২ বছর বয়স, তহুন মাতার ব্রেইন ডিসটাব হই গেছে। রাস্তার মধ্যে দাঁড়াইয়া আমারে ডাকে, দাও লইয়া। তিন বছর ওষুধ খাওয়াইছি। আমার আর পয়সাকড়ি নাই, মাঝে আর পারছি না। এইভাবে রইছিল বাড়িতে। এরপরে তো চইলে গেল। পরে ফেসবুকে ছবি ছাড়িছে। গ্রামের লোক ওই ছবি আটকাইছে। পাগল হইলেও তো মনে হরেন আমার ছেলে। বাড়িত থাকলে আমার শান্তি লাগে। পাগলডারে আমি ফালাই কই? ভালাডা রাইখে আমি পাগলডারে ফালতে পারতাম! স্যারেরে ধন্যবাদ। আমার ছেলেরে আইনা দিছে।’

গতকাল সন্ধ্যায় রাজশাহীতে ১ বিজিবি ব্যাটেলিয়ন সদর দপ্তরে মঞ্জুরুলকে তাঁর বাবা হালিম উদ্দিনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মঞ্জুরুল চুপচাপ বসে আছেন। কোনো প্রশ্ন করলেও উত্তর দেননি। তবে হালিম উদ্দিনের দিকে আঙুল তুলে এটা কে জানতে চাইলে মঞ্জুরুল হেসে বলেন, ‘আব্বা।’
হালিম উদ্দিন জানান, তাঁর গ্রামের এক বাসিন্দা ফেসবুকে মঞ্জুরুলের ভিডিও দেখে তাঁকে জানিয়েছিলেন। তখন তিনি বিষয়টি স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে জানান। বিজিবির কর্মকর্তারা ওই ভিডিও দেখে বুঝতে পারেন, মঞ্জুরুল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় রয়েছেন। তখন ময়মনসিংহ থেকে রাজশাহী বিজিবি ব্যাটালিয়নে যোগাযোগ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সম্প্রতি ‘বিটি টিভি’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে মঞ্জুরুলের ওই ভিডিও পোস্ট করা হয়। এতে একজন ভাষ্যকারকে বলতে শোনা যায়, ‘দেখুন তো চিনতে পারেন কিনা ছেলেটিকে। হয়তোবা আপনাদের আশেপাশের কোনো গ্রামের ছেলে। মুখে পুরো ঠিকানা বলতে পারছে না সে।’ ভিডিওতে এক ব্যক্তি মঞ্জুরুলকে তাঁর বাবার কথা জিজ্ঞাসা করেন। মঞ্জুরুল কোনো কথা বলেন না। তাকাতে বললে তিনি মুখ তোলেন। হাসতে বললে, তিনি শুধু ঠোঁট ফাঁক করে দাঁত দেখান।

রাজশাহী ১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউল ইসলাম মণ্ডল গতকাল রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, এক বছর আগে মানসিক ভারসাম্যহীন বাংলাদেশি মঞ্জুরুল হক (২২) ময়মনসিংহ এলাকা হতে নিখোঁজ হওয়ার পর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বিষয়টি অবগত হয়ে বিজিবি রাজশাহী ব্যাটালিয়ন ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ৭৩ ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। একাধিকবার যোগাযোগের পর ১৮ মার্চ বিএসএফের পক্ষ থেকে  ছেলেটির সন্ধান পেয়েছে বলে জানায়। মঙ্গলবার রাজশাহী ব্যাটালিয়নের (১ বিজিবি) অধীন চরমাজারদিয়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ১৬৫/৪-এস এর কাছে ৭৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাহারপাড়া ক্যাম্প কমান্ডারের মধ্যে পতাকা বৈঠক হয়। এ সময় মঞ্জুরুল হককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।