নদীভাঙনে হুমকিতে সেতু

ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদীর ভাঙনে ঘিওর উপজেলার ৩০টি বসতভিটা ও একটি হাটের একাংশ বিলীন হয়ে গেছে।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় ইছামতী নদীতে পানি বাড়ায় প্রচণ্ড স্রোতের কারণে ঘিওর হাটবাজারের একাংশ বিলীন হয়ে গেছে
ছবি: প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঐতিহ্যবাহী বিশাল হাটবাজারের একাংশ ও অন্তত ৩০টি বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের কবলে পড়েছে হাটসংলগ্ন সেতু, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একটি মসজিদ, শতাধিক বসতবাড়িসহ কয়েক শ বিঘা ফসলের জমি।

এলাকাবাসী এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় যমুনা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় এর শাখা নদী ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদীতে গত এক সপ্তাহ ধরে পানি বাড়ছে। ধলেশ্বরী ও ইছামতী নদীর পাড়ে শতাধিক বছরের পুরোনো ঘিওরে হাটবাজারসহ বসতভিটা, কুস্তা সেতু, কালভার্ট এবং অসংখ্য বসতবাড়ি রয়েছে।

ইছামতী ও ধলেশ্বরী নদীর তীব্র স্রোতের কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে দুই তীরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। এতে কুস্তা এলাকায় ঘিওর হাটের বেশ কিছু অংশ, অন্তত ৩০টি বসতভিটা ও কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া কুস্তা এলাকায় কফিল উদ্দিন দর্জি উচ্চবিদ্যালয়, কুস্তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইছামতী নদীর ওপর সেতু, কুস্তা কবরস্থান, আল আকসা জামে মসজিদ ও শ্মশান ভাঙনের কবলে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধের ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই এসব প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে কয়েকটি পরিবার ঘর নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছে।

স্থানীয় ঘিওর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, ঘিওর হাটের পাশে কুস্তা এলাকায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে নদীভাঙনে ৩০টি পরিবার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল বুধবার এসব পরিবারকে আর্থিক সহায়তার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, ইছামতী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় তীব্র স্রোত বইছে। ঘিওর গরুর হাট নদীতে অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। এলাকায় প্রবল ভাঙনে দোকানপাট নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষায় দোকানপাট ও মালামাল লোকজন অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। পাকা স্থাপনা ভেঙে রড বের করছেন কয়েক শ্রমিক। নদীর পশ্চিম পাশে কুস্তা ও রসুলপুর গ্রামে বেশ কয়েকটি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো হতাশায় রয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর সদস্যরা।

রসুলপুর গ্রামে গিয়েও নদীভাঙনের চিত্র দেখা গেছে। এ গ্রামের মো. নাজিমুদ্দিনের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অন্যত্র গিয়ে চলে গেছেন।

কুস্তা গ্রামের আওলাদ হোসেনের (৭০) অধিকাংশ বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তাঁর স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬০) বলেন, ‘দুটি আধা পাকা ঘর, পাকা শৌচাগার ও গাছপালা নদীতে চলে গেছে। ছেলে স্ত্রী ও ছোট নাতিপুতি নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিছে।’

শতাধিক বছর পুরোনো ঘিওর হাটবাজারে দুই শতাধিক দোকানপাট রয়েছে। এটি জেলার ঐতিহ্যবাহী এটি হাট। এ বিষয়ে ঘিওর হাটবাজার ব্যবসায়ী ব্যবস্থাপনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মতিন মুসা বলেন, উপজেলা ছাড়াও জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ এই হাট ও বাজারে কেনাকাটা করতে আসেন। তবে ইছামতী নদীর ভাঙনে এখন জেলার গুরুত্বপূর্ণ এই হাটবাজারের বেশকিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না গেলে আগামীতে পুরো হাটবাজারই নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

ইউএনও হামিদুর রহমান বলেন, ঘিওর হাটবাজার ভাঙনরোধে ওই এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনরোধে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন বলেন,হাট–বাজারের ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বসতবাড়ি রক্ষায় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্রতিরোধব্যবস্থা নেওয়া হবে।