‘স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার ছেলেমেয়েদের বিষণ্নতা-হতাশা বাড়াচ্ছে’

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালায় বক্তব্য দেন রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনীন্দ্র কুমার রায়। গতকাল নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা এলাকায় রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীদের বিষণ্নতায় (ডিপ্রেশন) ভোগার অন্যতম কারণ স্মার্টফোন। স্মার্টফোন ছেলেমেয়েদের বিষণ্নতা-হতাশা বাড়াচ্ছে। শুধু ছেলেমেয়েরা নয়, বয়স্করাও স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। একটি পরিবারে চারজন মানুষ থাকলে চারজনই স্মার্টফোন নিয়ে বসে পড়ছেন। তাঁদের মধ্যে কোনো কথাবার্তা নেই। এটার কারণে সামাজিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে। সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে হলে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার কমাতে হবে। স্মার্টফোন যত কম ব্যবহার করা হবে, তত হতাশা কম হবে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতে হবে।

নারায়ণগঞ্জে প্রথম আলো বন্ধুসভার আয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক কর্মশালায় আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মণীন্দ্র কুমার রায় এসব কথা বলেন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারকক্ষে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

আয়োজনে সহযোগিতা করেছে ইউনিমেড ইউনিহেলথ ফার্মাসিউটিক্যালস ও প্রথম আলো ট্রাস্ট। সকালে শুরু হওয়া কর্মশালা বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত চলে। কর্মশালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী ও নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার বন্ধুরা অংশ নেন।

সকালে কর্মশালার উদ্বোধন করেন আর পি সাহা বিদ্যালয়ের উপাচার্য মণীন্দ্র কুমার রায়। বক্তব্য দেন সহযোগী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান, প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায়, প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা, সিটি হাসপাতালের সাইকোথেরাপিস্ট কনসালট্যান্ট মাহমুদা মুহসিন বুশরা, ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুবিনা হোসেন, প্রথম আলোর নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি মজিবুল হক, নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার সভাপতি মনিকা আক্তার, সাবেক সভাপতি আফরিন সুলতানা, সাধারণ সম্পাদক নয়ন আহমেদ প্রমুখ। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন আর পি সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদ হাসান।

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে হতাশার পরিমাণ অনেক বেশি। কীভাবে তাঁদের হতাশা কাটানো যায়, সেই চিন্তা থেকে এই কর্মশালার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন আত্মহত্যা করেন। এটা সরকারি হিসাব। নানা কারণে মানুষের জীবনে হতাশা আসে, হতাশা আসাটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীর প্রত্যেকে সফল হবেন, সেটা আজ না হোক কাল। তাই হতাশ হওয়া চলবে না, ধৈর্য ধরে জীবনটাকে উপভোগ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের মাদকবিরোধী শপথবাক্য পাঠ করান প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা। তিনি বলেন, প্রথম আলো ট্রাস্ট মাদকবিরোধী আন্দোলনে কাজ করে যাচ্ছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। জীবনে ঝড়ঝাপটা আসবেই, হেরে গেলে চলবে না। হেরে না গিয়ে জীবনে চ্যালেঞ্জ নেওয়া—এটাই হচ্ছে জীবনের সৌন্দর্য।

মনের যত্ন নিয়ে আলোচনা করেন সাইকোথেরাপিস্ট কনসালট্যান্ট মাহমুদা মুহসিনা বুশরা। তিনি বলেন, ‘শরীরের সঙ্গে মনের যত্ন নিতে হবে। মনের অসুখ সম্পর্কে জানতে হবে। নিজেকে ভালোভাবে জানতে হবে, ভালোবাসতে হবে। মনের অসুখ থাকলে পরিবারকে জানাতে হবে। যেটা পরিবারকে জানাতে পারবে না, সেটা মনোরোগ–বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। কোনোভাবেই হতাশ হওয়া যাবে না। তাই স্ট্রেস কমিয়ে আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে।’

আর পি সাহা বিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রিয়জন, প্রিয়তম থাকবেই। কিন্তু নিজের জীবনের মূল্য সবার ওপরে। তোমাদের ওপরে তোমার পরিবার, তোমার দেশ, তোমার ভবিষ্যৎ অনেক কিছু নির্ভর করছে। তাই হতাশ হলে চলবে না। নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত রাখতে হবে।’

কর্মশালায় হাত তুলে মাদককে না বলছে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। শনিবার নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা এলাকায় রনদা প্রসাদ সাহা ইউনির্ভাসিটি প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক রোগ নিয়ে আলোচনা করেন মনোরোগ চিকিৎসক রুবিনা হোসেন। তিনি বলেন, বড় কোনো কারণ ছাড়া সারাক্ষণ মান খারাপ থাকছে। তখন বারবার অতীত কোনো ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে বা নেতিবাচক চিন্তা আসে। এসব কারণে ঠিকমতো মানুষের ঘুম হচ্ছে না, খাওয়া কমে যাচ্ছে। এতে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এই নেতিবাচক চিন্তা থেকে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতা তৈরি হয়। প্রত্যেকটা মানুষ বিভিন্ন ধরনের ডিপ্রেশনে ভোগেন। তিনি বলেন, বংশগত কারণে ৫০ শতাংশ মানুষের মধ্যে মানসিক রোগ দেখা যায়। যাঁরা এগুলো জয় করতে পারেন না, তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তরুণদের ভূমিকা ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি আফরিন সুলতানা। কর্মশালা শেষে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনদ বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।