ফলন ভালো, দামে খুশি কৃষক 

দুই-তিন বছর ধরে বাজারে ভুট্টার দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। ভুট্টার ফলনও ভালো। ভুট্টা চাষে খরচও কম।

প্রথমবারের মতো এক বিঘা পাঁচ কাঠা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার আমুড়িয়া গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী। এর মধ্যে ১৩ কাঠা জমির ভুট্টা মাড়াই করে তিনি ৪২ মণ ভুট্টা পেয়েছেন। ওই ভুট্টা তিনি এক হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভুট্টা চাষে ধান চাষের চেয়ে খরচ অনেক কম। প্রথমবারের মতো ভুট্টা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। বাজারে ভুট্টার চাহিদা আছে। দামও ভালো। এখন বাজারে ভুট্টা ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।’

গত বছর প্রথবারের মতো তিন বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছিলেন একই উপজেলার ভাঙ্গুড়া গ্রামের কৃষক শামীম রেজা। ওই ভুট্টার গাছ ও ভুট্টা তিনি সাইলেজ (সবুজ ঘাসের পুষ্টি উপাদান ঠিক রেখে বায়ুশূন্য অবস্থায় সবুজ ঘাসকে ভবিষ্যতের জন্য প্রক্রিয়াজাত করে রাখার প্রক্রিয়া) হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। এবার তিনি ১৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। এর মধ্যে তিনি দুই বিঘা জমির ভুট্টা মাড়াই করে ৯০ মণ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার গরুর খামার আছে। পাঁচ বিঘা জমির ভুট্টাগাছ ও ভুট্টা আমি সাইলেজ করেছি। অবশিষ্ট ১০ বিঘা জমির ভুট্টা মাড়াই শুরু করেছি। ওই জমি থেকে আমি ৪৫০ থেকে ৫০০ মণ ভুট্টা পাব। ভুট্টা চাষ লাভজনক। খরচ কম। ফলন ভালো হয়।’

যশোরে ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। এবার মৌসুমজুড়ে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। এ জন্য এ বছর জেলায় ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে ভুট্টার দামও ভালো। ভুট্টা চাষ করে এবার খুশি জেলার কৃষক।

পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, যশোরে প্রতিবছরই ভুট্টার চাষ বাড়ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলায়  ৬৩৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছিল। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমিতে এবং ২০২০-২১ মৌসুমে ভুট্টার আবাদ হয় ১ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ভুট্টার আবাদ হয়েছে ১ হাজার ২৩৭ হেক্টর জমিতে। জেলায় গত বছরের চেয়ে এবার ১৬২ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৪৯ হেক্টর, শার্শা উপজেলায় ২৪০, চৌগাছা উপজেলায় ৪৩০, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১৫০, মনিরামপুর উপজেলায় ১৮৫, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৩৮, অভয়নগর উপজেলায় ৫০ এবং কেশবপুর উপজেলায় ৯৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। সূত্র জানায়, এবার জেলায় ৯০০ জন কৃষককে ২ কেজি করে ভুট্টা বীজ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক কৃষক ভুট্টা চাষে ২০ কেজি করে ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) এবং ১০ কেজি করে এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার পেয়েছেন।

সম্প্রতি জেলার বাঘারপাড়া, যশোর সদর ও অভয়নগর উপজেলার কয়েকটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে সবুজ পাতা ছড়িয়ে দিয়ে খেতে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে আছে ভুট্টাগাছগুলো। বেশির ভাগ গাছ থেকে ভুট্টার মোচা তোলা হয়েছে। অনেক খেতে গাছ থেকে ভুট্টার মোচা তোলা এবং মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষক।

কৃষকেরা জানান, গত দুই-তিন বছর ধরে স্থানীয় বাজারে ভুট্টার দাম ভালো থাকছে। ভুট্টার ফলনও ভালো হয়। ভুট্টা চাষে খরচও কম। এ কারণে তাঁরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

যশোর সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন,‘এবার আমি প্রথম পাঁচ কাঠা শতক জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। ভুট্টা ভালো হয়েছে। জমি থেকে আমি ১৭ মণ ভুট্টা পেয়েছি। ভুট্টার ফলনে আমি খুশি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘ভুট্টা চাষে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় জেলার এবার ৯০০ কৃষককে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। ভুট্টার দামও ভালো।’