কার্যালয়ে ঢুকে পাউবো কর্মকর্তাকে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

পাউবোর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে কয়েকজন যুবক আসেন
ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক প্রকৌশলীকে তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে। কার্যালয় থেকে শহর রক্ষা বাঁধের বটতলায় নিয়ে ওই প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করা হয়। এক ঘণ্টা পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রকৌশলীকে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিতে গিয়ে আহত হয়েছেন দায়িত্বরত এক আনসার সদস্যসহ দুজন।

তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলছেন, তাঁদের ঠিকাদারি কাজের বিল আটকে রেখে টাকা দাবি করেছিলেন ওই কর্মকর্তা। এখন বিল না দেওয়ার জন্য তাঁরা এই অভিযোগ করছেন।

পাউবো কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, বুধবার রাতে ৮-১০ জনের একটি দল ৪টি মোটরসাইকেল নিয়ে শহরের সরুই এলাকার পাউবোর বাগেরহাট সদর উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে মারধর করে জোর করে ধরে নিয়ে যান। এ সময় বাধা দিতে গেলে সেখানে দায়িত্বরত এক আনসার সদস্য ও গেট অপারেটরকে মারধর করেন তাঁরা। আহত আনসার সদস্য নিত্যানন্দের নাক ফেটে গেছে। তাঁকে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে মোটরসাইকেল নিয়ে ওই দলটি পাউবোর বাগেরহাট জেলা কার্যালয়ে যায়। সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, বুধবার রাত ৯টা ৩৩ মিনিটে একে একে চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে ১০ যুবক আসেন। তাঁরা সবাই কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তাঁরা প্রতিটি কক্ষে ঘোরেন। সেখানে ওই কর্মকর্তাকে না পেয়ে ৯টা ৩৫ মিনিটে আবারও মোটরসাইকেলে করে বেরিয়ে যান তাঁরা।

পাউবো সূত্র জানায়, এরপরই তাঁরা পাউবোর সরুই এলাকার কার্যালয়ে যান। সেখানে বকেয়া বিল না দেওয়ার অভিযোগে উপসহকারী প্রকৌশলী আবু হানিফকে হুমকি ও গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা আবু হানিফকে বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মনির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান ওরফে ওশান তাঁকে ডেকেছেন। তবে ওই প্রকৌশলী তাঁদের সঙ্গে যেতে রাজি হননি। এরপর জোর করে তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ওই কার্যালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য নিত্যানন্দ এগিয়ে গেলে তাঁকে মেরে নাক-মুখ ফাটিয়ে দেন তাঁরা। কার্যালয়ের গেট অপারেটর নাইমকেও মারধর করা হয়।

আহত আনসার সদস্য
ছবি: সংগৃহীত

ভুক্তভোগী প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, ‘কাজের চাপ থাকায় রাতে অফিসে বসে কাজ করছিলাম। এ সময় কয়েকজন ছেলে এসে আমাকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলে। রাজি না হলে মারধর করে জোর করে নিয়ে যায়। ঠেকাতে গেলে নিত্যানন্দ ও নাইমকেও মারধর করে। তারা আমাকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে কাঁচাবাজারসংলগ্ন শহর রক্ষা বাঁধের বটতলায় নিয়ে যায়।’

আবু হানিফ আরও বলেন, বটতলায় একটি কাজের বিল না দেওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয়। তাঁদের ঠিকাদারি কাজের বিল আটকে রেখেছি কেন—তা জানতে চায়। কিন্তু কোন কাজ বা কিসের বিল এটা তিনি ঠিক জানেন না। সেখানে এক ঘণ্টা তাঁকে রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি বাড়ি ফিরে যান। তবে এই ঠিকাদার কে, এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি প্রকৌশলী।

এ বিষয়ে রাতেই আবু হানিফ বাগেরহাট মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে অভিযোগে কারও নাম না দিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করা হয়। এর কারণ হিসেবে তিনি রাতের অন্ধকারে কাউকে চিনতে না পারার কথা বলছেন।

পাউবোর বাগেরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী ৮ থেকে ১০ জন মোটরসাইকেলে করে কার্যালয়ে ঢুকে উপসহকারী প্রকৌশলীকে মারধর করে ধরে নিয়ে যান। এ সময় দুজন আহত হন। স্থানীয় প্রশাসনকে জানালে একপর্যায়ে আবু হানিফকে ছেড়ে দেন তাঁরা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষী ব্যক্তিদের সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনির ও সাধারণ সম্পাদক ওশানের কথা বলে হামলাকারীরা হানিফকে ধরে নিয়ে যান। তাঁদের দাবি ছিল, দুই-তিন বছর আগে তাঁরা ঠিকাদারি কাজ করেছিলেন, ওই কাজের বিল পাবেন। তবে এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার নাহিয়ান আল সুলতান বলেন, যে প্রকৌশলী (হানিফ) অভিযোগ দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে তাঁদের কিছু লেনদেন ছিল। কয়েক দিন আগে হানিফ তাঁদের কাছে একটা বড় অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবি করেন। তাঁরা ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি বিলটি আটকে দেন। এর সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীও জড়িত। গতকাল তাঁকে ডেকে শুধু কথা বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনই তাঁকে নিয়ে গেছেন। তাঁকে কোনো মারধর করা হয়নি। জোর করে আনা হয়নি, জোর করে আনলে তিনি তো ৯৯৯ বা পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারতেন।

ছাত্রলীগের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন বলেন, ‘তাঁরা বিল পাওয়ার দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। তাঁদের বিলের কাগজ থাকলে তাঁরা তা দেখাক। আমরা তো আর পকেট থেকে টাকা দেব না। তাঁরা টাকা পেলে আমরা লিখব। সরকারি টাকা। তাঁরা কাগজপত্র দেখাতে পারলে পেয়ে যাবেন।’

বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক বাবুল আক্তার বলেন, প্রকৌশলীকে মারধর করা হয়েছে এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।