প্রতিকূল সুন্দরবন থেকে উপকূলে ফিরছে শত শত নৌকা
খুলনার সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় ঘূর্ণিঝড় মোখা আতঙ্কে সুন্দরবনে মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে শত শত মাছ ধরার নৌকা। জেলেরা বলছেন, বনের পাশে বঙ্গোপসাগর ভয়ংকরভাবে উত্তাল হয়ে ওঠায় উপকূলে ফিরে এসেছেন তাঁরা।
আজ শনিবার সকালে দেখা যায়, উপজেলার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনসংলগ্ন সুতিয়া বাজার লঞ্চঘাটের পাশে অর্ধশতাধিক মাছ ধরার নৌকা ভিড়ে আছে। নৌকায় থাকা জেলেরা বলেন, সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালের পানি বেড়ে গেছে।
নৌকায় মাছ ধরার জাল গোছাতে ব্যস্ত কয়রার মহারাজপুর এলাকার জেলে জাকির হোসেন বলেন, তাঁরা বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে ছিলেন। তবে জঙ্গলের নদীতে এখন অনেক ঢেউ। এ জন্য আগাম আবহাওয়ার খবর পেয়ে উপকূলে ফিরে এসেছেন। আরও অনেক নৌকা সুন্দরবনে আছে, সেগুলোও উপকূলে আসতে শুরু করেছে। গহিন জঙ্গলে যাঁরা আছেন, তাঁদের কাছে ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা পৌঁছালে তাঁরাও চলে আসবেন বলে জানান তিনি।
সুন্দরবন জেলে-বাওয়ালি ফেডারেশনের সভাপতি মীর কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সুন্দরবনের নদ-নদী, খালের পানি বাড়তে শুরু করায় ও সমুদ্র উত্তাল থাকায় গতকাল থেকেই সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালিরা নিরাপদে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছেন। বর্তমানে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ, কোবাদক, বানিয়াখালী, নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশন থেকে অনুমতি নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া তিন শতাধিক নৌকা ফিরেছে। এখনো গহিন সুন্দরবনে অনেক নৌকা আছে। সেসব নৌকার জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
কয়রার গোবরা এলাকার জেলে মজিবর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই সুন্দরবনের মধ্যে নদীতে পানি ও ঢেউ বাড়তে শুরু করে। প্রথমে তাঁরা মনে করেছিলেন, এটা স্বাভাবিক ঘটনা, হয়তো কিছু সময় পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু তা স্বাভাবিক না হয়ে শুক্রবার আরও বেশি হয়। সঙ্গে সঙ্গে বনের মধ্যে তীব্র গরম লাগতে থাকে। এমন প্রতিকূল পরিবেশে টিকতে না পেরে তাঁরা জাল টেনে লোকালয়ে ফিরে এসেছেন।
সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সুন্দরবনের নদ-নদী ও খালে আজ ভোরের জোয়ারে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় আড়াই ফুট পানি বেড়েছে। পাশাপাশি নদীতে ঢেউও বেড়েছে। জেলেরা সুন্দরবন থেকে ফিরে আসছেন। বন বিভাগও তাঁদের নিরাপদ স্থানে থাকতে বলেছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার জন্য বন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে তাঁদের প্রত্যেককে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারসহ শুকনো খাবার মজুতের জন্য প্রত্যেক টহল ফাঁড়ি ও অফিসকে বলা হয়েছে।
সুন্দরবনে অবস্থানরত জেলেরা যেন নিরাপদে তীরে ফিরে আসেন, সে জন্য মৎস্যজীবী সমিতি ও জেলেদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মমিনুর রহমান।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার গতি বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের উপকূলের সঙ্গে এর দূরত্ব কমছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায়ই এ ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাব পড়তে শুরু করবে কক্সবাজার ও এর কাছাকাছি উপকূলীয় এলাকায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেওয়া ১৩ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এ জন্য কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।