বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, যেকোনো সময় দিন-তারিখ ঘোষণা করা হোক: খন্দকার মোশাররফ

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শনিবার বিকেলে উপজেলার আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। বিএনপি ৩০০ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তাই যেকোনো সময় নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করা হোক।

আজ শনিবার বিকেলে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মসূচির প্রতিবাদ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষণার দাবি’তে এক জনসভায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কথা বলেন। উপজেলার আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ জনসভা হয়।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে এ দেশের ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছেন। বিএনপি গত ১৫ বছর যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছিল, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান তারই চূড়ান্ত ফসল। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি ছাত্র নিহত হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র–জনতা আহত হয়েছেন। দাউদকান্দিতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী রিফাত এবং বাবুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ছাত্র–জনতার ঐক্যবদ্ধের ভিত্তিতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। অবশেষে দেশে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সেই আন্দোলনের ফসল হিসেবে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন করি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী কী সংস্কার করবে, দেড় বছর আগেই ৩১ দফার মাধ্যমে তা প্রকাশ করা হয়েছে।’

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে বিএনপির জনসভায় নেতা–কর্মীদের ঢল নামে। শনিবার বিকেলে উপজেলার আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য গত ১৫ বছর বিএনপি আন্দোলন করেছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিএনপি অন্যান্য দল নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। দেশকে সুরক্ষার জন্য, দেশ থেকে সব অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন, খুন, লুট দূর করার জন্য বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। এর জন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে শাস্তি দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জেল খাটিয়েছে। মিথ্যা মামলার কারণে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেননি। জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে শাস্তি দিয়েছে। জেল খাটিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত এমন নেতা-কর্মী নেই, যাঁরা হামলা-মামলার শিকার হননি। মিথ্যা মামলায় অনেককে কারাবরণ করতে হয়েছে। তাঁকে (খন্দকার মোশাররফ) এ বয়সে একাধিকবার কারাগারে যেতে হয়েছে। ১৭টি মিথ্যা মামলায় আদালতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছেন। অবশেষে সব মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার সুনির্দিষ্ট যে দুর্নীতি, অন্যায়-অত্যাচার, লুটতরাজ, খুন, লুট, রাহাজানি করেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায়ের বিচার আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি না। জুলাই-আগস্টে যারা নির্বিচার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে, তাদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি। দাউদকান্দিতে রিফাত ও বাবু হত্যার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাংলাদেশে এখনো নানা ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা কিন্তু এসব ষড়যন্ত্র আশা করিনি। যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সৃষ্টি করতে চায়, বিএনপি এ দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারী যারা ছিল, তারা কিন্তু বিদেশে পালিয়েছে। অনেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’

জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার মারুফ হোসেন (খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে) বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই তাঁর বাবাকে দ্বিতীয়বারের মতো হত্যা করেছেন। দেশের কোটি কোটি টাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল তৈরি করেছিলেন। সে ম্যুরাল গণ-অভ্যুত্থানের পর জনগণ ভেঙে দিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমানকে দ্বিতীয়বারের মতো হত্যা করেছেন।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন দাউদকান্দি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ সেলিম সরকার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান সরকার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাশেম, দাউদকান্দি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এ কে এম সামছুল হক, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ লতিফ ভূঁইয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, সদস্যসচিব জাহাঙ্গীর আলম ও তিতাস উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওসমান গনি প্রমুখ।

বিএনপির জনসভার কারণে বেলা আড়াইটা থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত দাউদকান্দিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। শনিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট

জনসভার কারণে দাউদকান্দি উপজেলার গাজীপুর থেকে দাউদকান্দি সদর পর্যন্ত জনগণের ঢল ছিল। এ জন্য বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতুর প্লাজা থেকে হাসানপুর পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। যানজটে আটকে থেকে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। জনসভা শেষে বিকেল পাঁচটার পর থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের রাজারহাট থেকে গৌরীপুর পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট লেগে ছিল।