দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজ চুয়াডাঙ্গায়, বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ

সূর্যের দেখা না মেলায় দিনেও শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। আজ সকাল সাড়ে আটটায় চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ঘোড়ামারা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ আরও নেমেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, টানা দুই দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গায় আজ থেকে আবারও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বাতাসের আদ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে ৯৭ শতাংশ।

হাটকালুগঞ্জ প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে। সকাল ছয়টার পর থেকে এলাকাভেদে কুয়াশা শুরু হয়েছে। তবে ওপরের আকাশ পরিষ্কার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলা এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা ক্রমেই নামতে থাকবে।

বাংলা দিনপঞ্জি অনুযায়ী, আজ পৌষের ২৮ তারিখ। পৌষের শেষ প্রান্তে এসে যেন মাঘের হাড়কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে। ঘন কুয়াশা আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সূর্যের দেখা না মেলায় দিনেও শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ। বিশেষ করে সেচনির্ভর বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে কাদা-পানির ভেতরে কাজ করতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কৃষিশ্রমিকেরা।

আজ সকাল সাড়ে আটটায় চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কে সদর উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকায় কৃষিশ্রমিক আবদুল আলিমকে এক জোড়া মহিষ ও মই নিয়ে মাঠের দিকে যেতে দেখা যায়। আবদুল আলিম বলেন, ‘চাইরদিকি অ্যাকন ধানের চারা লাগাইনোরি সিজেন চলচে। চারা লাগাইনোর আগে জমি নেবেল করতি হয়। কদিন ধইরে জাড়ের (শীত) মদ্যিই কাদা-পানিতি কাজ করচি। ইতি খুপ কষ্ট হচ্চে।’

মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গায় আজ থেকে আবারও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

সদর উপজেলার খেজুরতলা গ্রামের কৃষক তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘আইজ সকাল থেইকেই ঘন কুয়ো (কুয়াশা)। কুয়োর ঠ্যালায় চোকি কিচুই দ্যাকা যাচ্চে না। কনকনে বাসাতি (বাতাসে) হাড় কাঁপচে। চাদরে শীত মানচে না। বোরো ধান লাগাতি কাদার ভিতর নামতিই ভয় করচে। অ্যারাম জাড়ের (শীতের) দিনি মনডা বলচে না ঘর থেইকে বেইর হই।’

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ শাখা থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকেও বিতরণ করা হয়েছে ২০০টি। সমাজের বিত্তশালী লোকজনকে অসহায় শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান।

শীতের যত রেকর্ড

২০০২ সালের ২ জানুয়ারি থেকে চলতি ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় আবহাওয়া অধিদপ্তরে সংরক্ষিত ২২ বছরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ২০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমের এই জেলায় শীত মৌসুমে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে ২০০২ সালের ২ জানুয়ারি ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০০৩ সালের ২২ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৩, ২০০৪ সালের ১০ জানুয়ারি ৭ দশমিক ২, ২০০৬ সালের ১১ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৩, ২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি ৭ দশমিক ২, ২০০৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ৬ দশমিক ৯, ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৪, ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি ৫ দশমিক ১, ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৯, ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি ৬ দশমিক ১, ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ৭ দশমিক শূন্য, ২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি ৬ দশমিক ১, ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি ৫ দশমিক ৮, ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি ৫ দশমিক ২, ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি ৬ দশমিক ১, ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি ৬ দশমিক ৮, ২০২১ সালের ১ ফেব্রয়ারি ৫ দশমিক ৭ ও ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।