জামালপুরে অটো রাইস মিলের বর্জ্য, কালো ধোঁয়ায় দুর্ভোগে বাসিন্দারা

পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করেই জনবসতিপূর্ণ জামালপুরের মুকুন্দবাড়ী এলাকায় গড়ে উঠেছে ওই কারখানা।

জামালপুরে অটো রাইস মিলের তুষের ছাইয়ের স্তূপ। গতকাল মুকুন্দবাড়ীতে
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুর শহরের আবাসিক এলাকায় এস কে এফ অটো রাইস মিলের বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই তা ব্রহ্মপুত্র নদে পড়ছে। এতে দূষিত হচ্ছে নদের পানি। মিলের ধোঁয়া ও ছাইয়ে গাছপালার পাতা কালো হয়ে গেছে। বাতাসে কারখানার ছাই লোকজনের চোখেও পড়ছে। বয়স্ক ও শিশুরা বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করেই জনবসতিপূর্ণ জামালপুরের মুকুন্দবাড়ী এলাকায় গড়ে উঠেছে ওই কারখানা।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার ধোঁয়া ও ছাইয়ে গাছপালার পাতা কালো হয়ে গেছে। কারখানার বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই তা ব্রহ্মপুত্র নদে পড়ছে। কারখানার দক্ষিণ পাশে হাইটেক পার্ক নির্মাণাধীন। কারখানাটি পার্কের একদম পাশে। কারখানার চুল্লি দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে তুষের ছাই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ওই ছাই নির্মাণাধীন পার্কের শ্রমিক ও বাসিন্দাদের চোখে গিয়ে পড়ছে। কারখানার সামনে দিয়ে পৌরসভার একটি নর্দমা রয়েছে। কারখানার পানি ও বর্জ্য ওই নর্দমা দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে যাচ্ছে। পানির রং কালো এবং এর ওপর কালো বর্জ্য ভাসছে। নর্দমাটি নদের যে স্থানে যুক্ত হয়েছে, সেখানকার আশপাশের পানির রংও কালো হয়ে যাচ্ছে।

পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, ‘জন্ম থেকেই এই এলাকায় বসবাস করছি। প্রথমে ওইখানে সাধারণ মানের চালকল ছিল। প্রায় সাত-আট বছর ধরে অটো রাইস মিল করা হয়েছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টা কারখানাটি চালু থাকে। এর অনেক শব্দও হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা বাতাসের সঙ্গে কারখানার চুল্লি দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে তুষের ছাই চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। ওই ছাই মানুষের চোখ-মুখ ও ঘরের ভেতর গিয়ে ঢোকে। প্রথম দিকে নানাভাবে প্রতিবাদ করা হয়েছিল। এখন কারখানাটি ঘেঁষে একটি হাইটেক পার্ক হচ্ছে। এত বড় একটি প্রকল্পের সঙ্গে এ রকম কারখানা থাকতে পারে না। এই কারখানাটি অন্য জায়গায় স্থানান্তরের দাবি করছি।’

পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করেই জনবসতিপূর্ণ জামালপুরের মুকুন্দবাড়ী এলাকায় গড়ে উঠেছে কারখানা
ছবি: প্রথম আলো

মুকুন্দবাড়ীর বাসিন্দা আফসর আলী বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর ধরে এই কারখানার পূর্ব পাশে বসবাস করছি। একদিকে কারখানার বিকট শব্দ, অন্যদিকে বাতাসে তুষের ছাইয়ের যন্ত্রণায় চলাফেরা করা যায় না। এলাকার গাছপালাগুলোর পাতা পর্যন্ত কালো হচ্ছে। এই কারখানার কারণে বাসিন্দারা নানাভাবে দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন।’

কারখানার মালিক এ কে এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি তিন লাখ টাকা খরচ করে কালো ধোঁয়া ও ছাই প্রতিরোধক লাগানো হয়েছে। তারপরও লোকজনের সমস্যা হচ্ছে বলে শুনেছি। এখন আবার আমার কারখানার সীমানা ঘেঁষে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথম দিকে হাইটেক পার্কের কারণে আমার কারখানার জমি অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল সরকার। তখন আমি রাজি হয়নি। যেহেতু এখন লোকজনের এবং হাইটেক পার্কের সমস্যা হচ্ছে। সরকার এখন জমি অধিগ্রহণ করতে চাইলে, সবার স্বার্থে আমার কোন আপত্তি নেই।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের জামালপুর জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মুহাম্মদ হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তাঁদের নিজস্ব গণ্ডির মধ্যেই থাকতে হবে। বর্জ্য ড্রেন বা নর্দমায় ফেলা যাবে না।  ওই প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ম মানছে না, এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’