দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা, বাড়ছে রোগীর সংখ্যা

গতকাল সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শয্যা–সংকটে রোগীদের বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

ডায়রিয়া আক্রান্ত ছেলে মাসুদ আল আরেফিনকে (১৩) নিয়ে গত রোববার থেকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে আছেন স্কুলশিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন। টানা কয়েক দিনের চিকিৎসার পর মাসুদের শারীরিক অবস্থা এখন কিছুটা উন্নতির দিকে।

মোফাজ্জল হোসেন পঞ্চগড় পৌরসভার মিঠপুকুর এলাকার বাসিন্দা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

শুধু মোফাজ্জল হোসেন নন, গত কয়েক দিন শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের নিয়ে এভাবেই হাসপাতালে থাকছেন বাবা-মায়েরা। শিশুদের পাশাপাশি নানা বয়সী নারী-পুরুষরাও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এবার হেমন্তের শুরু থেকেই দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে সন্ধ্যা নামার পর থেকে ভোর পর্যন্ত ঝরছে কুয়াশা। দিনের বেলা ঝলমলে রোদে উষ্ণতা অনুভব হলেও সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হচ্ছে শীতের অনুভূতি। সন্ধ্যার পর এই জনপদের বেশির ভাগ মানুষই গরম কাপড় পরে বের হচ্ছেন। সেই সঙ্গে রাতে ঘুমাতে হচ্ছে কাঁথা-কম্বল গায়ে জড়িয়ে।

গতকাল সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন বেলা ৩টা তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১৫ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ১৭ দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এ সময় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করেছে। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত শীত অনুভূত হলেও দিনভর তীব্র রোদে গরম অনুভূত হচ্ছে। এতে দিন ও রাতের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে। ১৭ দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলেও এই ১৭ দিনে তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করেছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার এই তারতম্যের কারণেই বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্ক মানুষ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

আগাম শীতে দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা অনুভূতির কারণে দিন দিন বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ঠান্ডাজনিত এসব রোগ এড়িয়ে চলতে সচেতন থাকার পাশাপাশি শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১০০ শয্যার এই সদর হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ১৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬১ জন, নারী ৮৭ জন এবং নবজাতক ও শিশু ৩৮টি ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ২৬ জনের মধ্যে বেশির ভাগই ঠান্ডাজনিত জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া এবং নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত। আর নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রটিতে (স্ক্যানু) ভর্তি ১২টি নবজাতক প্রায় একই ধরনের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। ১০০ শয্যার এই হাসপাতালে শয্যা সংকুলান না হওয়ায় শিশু, মহিলা ও পুরুষ রোগীদের মেঝেতে বিছানা দেওয়ার পাশাপাশি বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া গতকাল হাসপাতালের বহির্বিভাগে মোট ৮২২ রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৭০ পুরুষ, ৪১২ নারী এবং ২৪০টি শিশু রোগী রয়েছে।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের দোমনী-সরকারপাড়া এলাকার বেলী বেগম বলেন, তিনি গতকাল সকালে সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশু আরাফাতকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। দুই দিন ধরে শিশুটির জ্বর, সর্দি-কাশি। হাসপাতালে আনার পর শয্যা না পাওয়ায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ মঞ্জুয়ারা খাতুন বলেন, কয়েক দিন ধরেই হাসপাতালে রোগীর চাপ কিছুটা বেড়েছ। হাসপাতালে আসা নারী ও শিশু রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় অনেক রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক এস এম মাহবুব উল আলম বলেন, পঞ্চগড় একটি শীতপ্রবণ জেলা। গত কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এ সময় শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগ এড়াতে বাড়তি যত্ন নিতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের যেন কোনোভাবেই ঠান্ডা না লাগে, সে বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাড়তি সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।