‘সংসারটা ছারখার হয়ে গেছে, কার কাছে বিচার চাইব?’

মায়ের কবরের পাশে বসে কাঁদছেন দুই বোন লিজা আক্তার ও আফরোজা খাতুন। আজ সোমবার দুপুরে নান্দাইল উপজেলার বরুনাকান্দা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

পুলিশের কাছ থেকে ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন সুরাইয়া খাতুন। যাওয়ার আগে শাশুড়িকে ওষুধ খাইয়ে দেন। এর এক দিন পর সুরাইয়া লাশ হয়ে ফিরে আসেন। সুস্থ-সবল পুত্রবধূর এমন পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম (৬৫)।

মায়ের মৃত্যুসংবাদ শুনে বাবার বাড়ি ছুটে এসেছেন সুরাইয়া খাতুনের দুই মেয়ে লিজা আক্তার ও আফরোজা খাতুন। মা হারানোর শোক সামলাতে পারছেন না তাঁরা। তাঁরা কেঁদে চলেছেন; কখনো বাড়িতে আবার কখনো মায়ের কবরের পাশে বসে থাকছেন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বরুনাকান্দা গ্রামে আজ সোমবার দুপুরে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়।

আরও পড়ুন

সুরাইয়া ওই গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলামের স্ত্রী। গত বৃহস্পতিবার র‌্যাব-১৪-এর একটি দল সুরাইয়াকে নান্দাইল মডেল থানার সামনে থেকে গাড়িতে তুলে ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে তাঁদের হেফাজতে ওই নারী মারা যান বলে নান্দাইল মডেল থানা-পুলিশ জানিয়েছে। সুরাইয়া খাতুনকে গত শনিবার বিকেলে বরুনাকান্দা গ্রামে দাফন করা হয়। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ভৈরব থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

আজ দুপুরে বরুনাকান্দা গ্রামে সুরাইয়া খাতুনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সুরাইয়া প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে গৃহস্থালি কাজ করত। উঠান ঝাড়ু দিত। খাঁচার হাঁস-মুরগি ছেড়ে দিত। পরিবারের সবার জন্য সকালের নাশতা তৈরি করত। আমার সেবাযত্ন ও ওষুধপত্র গুছিয়ে দিত। আমি অপারেশনের রোগী। সংসার সামলানোর ভার ছিল সুরাইয়ার ওপর। সুরাইয়ার কী অপরাধ ছিল? কী কারণে তাকে মরতে হলো? আমার গোছানো সংসারটা ছারখার হয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাইব কার কাছে?’

সুরাইয়া খাতুনের মেয়ে লিজা আক্তার বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে প্রতিদিনই মুঠোফোনে কথা হতো। তিনি প্রতিদিনই আমাদের দুই বোনের খোঁজখবর নিতেন।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘কিসের যেন মামলা মীমাংসা করার কথা বলে পুলিশ আমার সুস্থ মাকে বাড়ি ডেকে নিয়ে গেছে? কীভাবে মা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন? আমার মায়ের কী অপরাধ ছিল? কারও কাছে এ প্রশ্নের উত্তর পাইনি।’ এসব কথা বলতে বলতে মায়ের কবরের পাশের বসে কাঁদতে থাকেন লিজা ও আফরোজা।

সুরাইয়ার স্বামী আজিজুল ইসলামকে আজ বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর আমার ছেলেটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। ভয়ে সে বাড়িতে আসতে চাইছে না। কোথায় অবস্থান করছে, তা-ও জানি না।’

আরও পড়ুন

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, মৃত সুরাইয়ার ছেলে তাইজুল ইসলামের (২৩) সঙ্গে একই উপজেলার ভেলামারী গ্রামের হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তারের (২০) বিয়ে হয়। গত ২৬ এপ্রিল শ্বশুরবাড়িতে রেখা মারা যান। এ ঘটনায় রেখার মা রামিছা বাদী হয়ে স্বামী তাইজুল ইসলাম, শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা করেন। গত বুধবার নান্দাইল থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়।