তাইবা জানল না সে কী হারাল

মো. সেলিম
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ। একটু করে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি। বিষণ্ন আবহাওয়া। সেই বিষণ্নতাকে আরও গভীর ব্যথায় পরিণত করে বাড়ি থেকে শেষবারের মতো চলে গেলেন মো. সেলিম। তাঁর দুই বছরের মেয়ে তাইবা ইসলাম ঠিক বুঝতে পারছিল না জীবন থেকে সে কী হারিয়ে ফেলল। তবে বাড়ির সবাই যখন ভেঙে পড়েছে বুকভাঙা কান্নায়, তাইবাও শামিল হয়েছে তাতে। সে সারা জীবন কেঁদেও আর বাবার মুখ দেখতে পাবে না কোনো দিন।

রাঙ্গুনিয়ার মো. সেলিম যে এভাবে চলে যাবেন, তা ভাবতেই পারেননি কেউ। গত জানুয়ারিতে তিনি দীর্ঘ দুই বছর পর প্রবাসজীবন কাটিয়ে কাতার থেকে দেশে ফিরেছিলেন প্রিয়জনের সান্নিধ্যে। বিশেষ করে একমাত্র সন্তান দুই বছরের মেয়ের মায়া–মমতার টানেই তাঁর এবার দেশে ফেরা। সে কারণে বেশ কিছুটা সময় হাতে নিয়েই এসেছিলেন দুবাই থেকে। পরিকল্পনা ছিল আসন্ন পবিত্র রমজান মাসটি দেশেই কাটাবেন স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে। ঈদের পরে ফিরে যাবেন কর্মস্থল দুবাইয়ে। কিন্তু নিমেষে ওলটপালট হয়ে গেল সবকিছু তাঁর মৃত্যুতে। ঘোরতর দুর্যোগ নেমে এল পরিবারটিতে।

মো. সেলিম গতকাল শনিবার দুপুরে রাঙ্গুনিয়া বাজারে গিয়েছিলেন কেনাকাটা করতে। বাজার করে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। রাঙ্গুনিয়া-রানীরহাট ডিসি সড়কের তেলিপুকুর এলাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা তাঁর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন সেলিম আর নেই। এই আকস্মিক মর্মান্তিক ঘটনায় কান্নার রোল ওঠে তাঁর বাড়িতে।

আজ রোববার খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সকাল দশটায় গ্রামের গোরস্থানে মো. সেলিমকে দাফন করা হয়েছে। সেলিমের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর ইউনিয়নের রাজঘাটা গ্রামে। তাঁরা পাঁচ ভাই, দুই বোন। সবার বিয়ে হয়েছে। তিনিই সবার ছোট। বাবা নেই, মা নূরজাহান বেগম বয়োবৃদ্ধ। নিজের কিছু সঞ্চয় আর বড় ভাইদের কাছ থেকে ধার করে প্রায় আট বছর আগে সেলিম দুবাই চলে যান। সেখানে তিনি বিভিন্ন কাজ করেছেন। এখন একটি মোটর গাড়ির শোরুমে কাজ করতেন। সেলিমের পরিবার থেকে জানা গেল, এখন বেশ ভালোই আয় করছিলেন তিনি। তবে পুরোপুরি সচ্ছলতা আসেনি। বছর চারেক আগে পাশের ইছামতি গ্রামের শাহেদা আক্তারের সঙ্গে সেলিমের বিয়ে হয়। দুই বছর আগে তাঁর সংসারে আসে মেয়ে তাইবা ইসলাম। মেয়েকে খুবই ভালোবাসতেন সেলিম। প্রবাসে থাকলেও প্রায় প্রতিদিন ভিডিও কল দিয়ে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতেন। মেয়ের টানেই এবার বেশ সময় নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। সেলিমের পরিকল্পনা ছিল আর কয়েক বছর বিদেশে কাজ শেষে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা করবেন। কিন্তু তা আর হলো না। স্বামীর মৃত্যুতে সেলিমের স্ত্রী শাহেদা এখন শোকে প্রায় নির্বাক। দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে পড়েছেন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে।