মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের উত্তরে কাওয়ারবিল এলাকায় দেশটি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) অবস্থানে আজ সোমবার দিনভর বিমান হামলা চালিয়েছে সে দেশের সরকারি বাহিনী। এ সময় কিছু অবকাঠামো ধ্বংস হয় এবং আগুনের কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ে।
নাফ নদীর এপারে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ওপারের আগুনের ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। এ সময় থেমে থেমে মর্টার শেল ও গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণ শোনা যায়।
সীমান্ত এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে আরাকান আর্মির সদস্যরা কাওয়ারবিল এলাকায় থাকা দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ১ নম্বর সেক্টরে হামলা চালান। বিজিপিও পাল্টা আক্রমণ করে। শুক্রবার রাতে বিজিপির সেক্টরটি দখল করে নেয় আরাকান আর্মি। এ সময় সেক্টরের কয়েক শ বিজিপি সদস্য এদিক–সেদিক পালিয়ে যান। এরপর শনিবার ও গতকাল রোববার কয়েক দফায় নাফ নদী অতিক্রম করে ১২৮ বিজিপি সদস্য টেকনাফে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন। সবাইকে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হেফাজতে রাখা রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বেদখল হয়ে যাওয়া বিজিপির ১ নম্বর সেক্টরটি পুনরুদ্ধারের জন্য আজ সকাল ৯টার দিকে কাওয়ারবিলে আরাকান আর্মির অবস্থানে বিমান হামলা শুরু করে সরকারি বাহিনী। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত এই হামলা আশপাশের কয়েকটি গ্রাম আশিক্যাপাড়া, আরশিয়াপাড়া ও বসুয়ার পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপ করা হয়। স্থলভাগেও দুই পক্ষের মধ্যে চলে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা। মর্টার শেল ও গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণে সেখানকার লোকজনের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন অবকাঠামোতে আগুন ধরে যায়। নাফ নদীর এপারে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়া ও নাজিরপাড়া থেকে ওপারের ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। ওপারের মর্টার শেলের বিস্ফোরণে টেকনাফ সীমান্তের কয়েকটি গ্রামে ভূকম্পন দেখা দেয়।
টানা আড়াই মাসের চলমান সংঘাত লড়াইয়ে ইতিমধ্যে মংডু টাউনশিপের উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব পাশের রাচিডং টাউনশিপসহ বিজিপির ১৪টি সীমান্তচৌকি, থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এখন মংডুটাউন দখলের জন্য মরিয়া আরাকান আর্মি। আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকতে না পেরে সেনাবাহিনী, বিজিপির সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। কিছু সদস্য আরাকান আর্মির কাছে আত্মসমর্পণ করেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান ও সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শরীফ আহমদ বলেন, আরাকান আর্মির দখলে থাকা বিজিপি চৌকিগুলো পুনরুদ্ধারে সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে সরকারি বাহিনী। স্থলভাগের চেয়ে তারা (সরকারি বাহিনী) আকাশপথে বিমান ও হেলিকপ্টারে শক্তিশালী মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপ করছে। এতে বিভিন্ন অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে, কিছু অবকাঠামোতে আগুন ধরে গেছে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নাফ নদীর টেকনাফ সীমান্ত থেকে ওপারের ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা গেছে।
পুলিশ, বিজিপি ও কোস্টগার্ড সূত্র জানায়, আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকতে না পেরে সর্বশেষ গত শনিবার তিন দফায় ৪০ জন এবং গতকাল রোববার ৮৮ জনসহ দুই দিনে মোট ১২৮ জন বিজিপি সদস্য টেকনাফে পালিয়ে আশ্রয় নেন। নিরস্ত্র করে সবাইকে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়।
বর্তমানে বিজিপির ১২৮ জনকে হ্নীলা উচ্চবিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে জানিয়ে হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, সেখানে বিজিপি সদস্যদের পরিচয় শনাক্তকরণের কাজ চলছে। বিজিপি সদস্যদের অবস্থানের কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
আশ্রিত ১২৮ বিজিপি সদস্যের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, এর আগে কয়েক দফায় ৬১৮ জন মিয়ানমার সেনা, বিজিপি ও ইমিগ্রেশন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে ২৮৮ জনকে গত ২৫ এপ্রিল এবং ৩৩০ জনকে ১৫ ফেব্রুয়ারি জাহাজে করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। তখন ৬১৮ জনকে রাখা হয়েছিল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির হেফাজতে সেখানকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।