কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের ফল কারচুপির অভিযোগ এনে সদর উপজেলার জিলা স্কুল কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন একজন সদস্য প্রার্থী। সোমবার বেলা তিনটার দিকের এ ঘটনায় তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা কেন্দ্রের সামনের মহাসড়কে গাড়িও ভাঙচুর করেন।
নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের (কুষ্টিয়া সদর উপজেলা) সদস্য প্রার্থী মামুন অর রশীদ ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
বিকেল চারটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মামুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোটের ফল কারচুপি করে আমাকে হারানো হয়েছে। প্রথমে যে ফলাফল শিট বের হয়েছিল, সেটা পকেটে রাখেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। পরে আরেকটি বের করে টাঙানো হয়। এ ফল মানি না। আমি লিখিত অভিযোগ জানাব।’
ওই কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুকেন কুমার পাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দিন মিডিয়াসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজনের কেন্দ্রে আসা-যাওয়া ছিল। ভোটের পুরো প্রক্রিয়া সিসি ক্যামেরার আওতার ভেতরে সম্পূর্ণ সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। কারচুপির প্রশ্নই উঠে না। এরপরও একজন সদস্য প্রার্থী অহেতুক অভিযোগ এনে আমাকে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা কেন্দ্রে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে বিজিবি ও পুলিশের সহায়তায় সব কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাই।’
নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আটজন সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট গ্রহণ শেষে বেলা আড়াইটার দিকে ফলাফল কাগজে লিখে কেন্দ্রের দেয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া হয়। এতে জহুরুল ইসলাম নামের এক প্রার্থী ৭৭ ভোট পান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মামুন অর রশীদ পান ৬৫ ভোট।
ঘটনার সময় কেন্দ্রের বাইরে ছিলেন এই প্রতিবেদক। এ ছাড়া কেন্দ্রের ভেতরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়।
তাঁরা বলেন, তাঁর ফল দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন মামুন। একপর্যায়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ অন্যদের কেন্দ্রে অবরুদ্ধ করে রাখেন তিনি। কেন্দ্রের সামনে থাকা তাঁর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা পৌনে তিনটার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। পাঁচ মিনিটের অবরোধে একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়। দুটি অ্যাম্বুলেন্সও আটকা পড়ে। আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও এ সময় তাঁদের নির্বিকার থাকতে দেখা যায়।
বিকেল পৌনে চারটার দিকে পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় কেন্দ্র থেকে পাঁচটি গাড়িতে করে ভোটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এরপর মামুন অর রশীদ ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা মহাসড়কে মিছিল করেন। এ সময় কেন্দ্রের সামনে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। একপর্যায়ে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়।
পরে পুলিশ কঠোর হলে মিছিল নিয়ে তাঁরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান এবং প্রশাসন বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
পরে বিকেল পাঁচটার দিকে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বেসরকারিভাবে জেলার সব কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেন। এতে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জহুরুল ইসলামকে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ভোট গণনার সময় তিনি কেন্দ্রের ভেতরে ছিলেন। এক পর্যায়ে বাইরে বিশৃঙ্খলা খবর পেয়ে কেন্দ্রের প্রধান ফটকের সামনে এসে দাঁড়ান। কিন্তু এর আগেই ফটকের সামনে মহাসড়কে একটি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে বলে জানতে পারেন। কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল যুবক মহাসড়কে অবরোধ করার চেষ্টা করলে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।