চট্টগ্রামে প্রতি তিন তরুণের একজন ‘নিষ্ক্রিয়’

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম জেলায় প্রতি ১০০ তরুণের মধ্যে প্রায় ৩০ জন অর্থনৈতিক দিক থেকে কিছুই করেন না। অর্থাৎ প্রতি তিনজনে একজন তরুণ ‘নিষ্ক্রিয়’। এ তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর।

গত শুক্রবার প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর জেলা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম জেলায় ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩০ দশমিক ৩৮ শতাংশ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ কিংবা কোনো কাজে নেই।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলায় শুমারি গণনার সময় ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৩১০ জন শিক্ষা, প্রশিক্ষণ কিংবা কোনো কাজে যুক্ত ছিলেন না। প্রতিবেদনে তাঁদের ‘নট ইন এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট অর ট্রেনিং’ বা নিট (neet) জনসংখ্যা হিসেবে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম নগর ও ১৫ উপজেলায় নিট জনসংখ্যার মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। পুরো জেলায় প্রায় ৪৬ দশমিক ৬২ শতাংশ নারী নিট জনসংখ্যার আওতায়। সংখ্যায় যা ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৪ জন। অন্যদিকে পুরুষের সংখ্যা ১ লাখ ১০ হাজার ৯২৬ জন। গড়ে ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, চট্টগ্রাম জেলার মোট জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি অর্থাৎ ৫ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে কিছু করেন না। শুমারি চলাকালে

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য

তাঁরা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ছিলেন না, অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত ছিলেন না কিংবা কোনো প্রশিক্ষণেও যুক্ত ছিলেন না।

নগরে কম, উপজেলায় বেশি

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, নগরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে অর্থাৎ চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় নিট জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২৪ জন তরুণ এই জনসংখ্যার আওতায়। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে এই সংখ্যা প্রতি ১০০ জনে ৩৪। এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে। এখানে শতকরা ৪১ জন তরুণ অর্থনৈতিকভাবে কিছুই করেন না বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

সন্দ্বীপের এমন চারজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের অধিকাংশ ব্যবসা কিংবা বিদেশযাত্রার জন্যই বর্তমানে কিছু করছেন না। এখানে করার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। একজন ব্যবসা করবেন বলে ঠিক করেছেন। মেয়েদের বেলায় বিয়ের কারণে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে এমনও আছে।

সন্দ্বীপ উপজেলা যুব উন্নয়ন সহকারী শামসুল আলমের মতে, করোনা মহামারির আগে–পরে সন্দ্বীপে প্রবাসীদের ফেরত আসার সংখ্যা বেড়েছে। আবার সন্দ্বীপের তরুণদের বেশির ভাগই বিদেশে যাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থেকে কোনো কর্মে নিয়োজিত হচ্ছেন না বলে এখানে বেকারত্বের হার বেশি।

নারীর সংখ্যা যে কারণে বেশি

নিট জনসংখ্যার মধ্যে প্রতিটি উপজেলা ও নগরে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি দেখা গেছে। জেলার ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ নারী নিট জনসংখ্যার আওতায়। যা প্রায় ৪ লাখ ৭৭ হাজার জনের বেশি। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ৬৩ শতাংশ বা ৩ লাখ ২৪ হাজারের বেশি।

এর মূল কারণ নারীদের অধিকাংশ রান্না বা ঘরের কাজ করেন। তবে শুমারিতে এটিকে অর্থনৈতিক কাজ হিসেবে ধরা হয়নি। সে হিসাবে অধিকাংশ নারী অর্থনৈতিকভাবে কিছু করেন না বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ নারী গৃহকর্ম করেন।

চট্টগ্রাম জেলা পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক মো. ওয়াহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু গৃহস্থালির কাজ অর্থনৈতিক আয়ে হিসাব করা হয় না, তাই ঘরের কাজ নিট জনসংখ্যার মধ্যেই। তবে কেউ যদি তা থেকে মুনাফা অর্জন করেন, তা এর বাইরে গণনা করা হয়েছে।

যুবকদের মধ্যে প্রবণতা বেশি

নিট জনসংখ্যা হিসাবের ক্ষেত্রে দুটি বয়স ভিত্তিতে তথ্য নিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। এর মধ্যে একটি ১৫ থেকে ১৯ বছর, অন্যটি ২০ থেকে ২৪ বছর। জেলায় ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুবকদের কিছু না করার প্রবণতা বেশি। জেলায় এ সংখ্যা ৩৯ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে এই প্রবণতা ৪৬ শতাংশের বেশি। নগরে তা ২৮ শতাংশ।

যুবকদের মধ্যে জেলায় প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজারেও বেশি কিছুই করেন না। গ্রামাঞ্চলে এ সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। সিটি করপোরেশন এলাকায় এই সংখ্যা এক লাখের বেশি। কাজের সুযোগ না পাওয়া, বিদেশ যাওয়া, ব্যবসার পরিকল্পনা ইত্যাদি কারণে তাঁরা কোনো কাজে যুক্ত হন না।

সরকারি পর্যায়ে যুবসমাজের অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত করতে নানা প্রকল্প থাকলেও তাঁরা আগ্রহী হন না বলে মনে করছেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কাজী আবদুল আলীম। তিনি বলেন, আইটি, সেলাই, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে সরকারি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও নিজেদের উদাসীনতার কারণে এসবে যুক্ত হতে চান না অনেকেই। প্রতি বছর আট হাজারের মতো নারী-পুরুষ বিভিন্ন কোর্স শেষ করে বের হচ্ছে সরকারিভাবে। নতুন করে যানবাহন চালানোর প্রশিক্ষণের প্রকল্পও নেওয়া হচ্ছে।