রাজশাহীতে ‘খরা মোকাবিলায় বন্ধন’ কর্মসূচি

রাজশাহীতে ‘খরা মোকাবিলায় বন্ধন’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী নগরের সাহেববাজারে খরা মোকাবিলায় বন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আগামীকাল ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক)।

কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ‘ফুল পাখি গাছ, পুকুরের নগর চাই’, ‘খরা তহবিল চাই’, ‘জলাধার দখল, দূষণ বন্ধ কর’, ‘সোনাদিঘি আর কত ছোট হবে’, ‘সকল প্রাণের অধিকার নিশ্চিত কর’, ‘রাজশাহীসহ সারা দেশের বৃক্ষনিধন বন্ধ কর’, ‘বরেন্দ্র অঞ্চল মরুময়তা রোধে কৃষিজমির সুরক্ষা চাই’, ‘পুকুর ভরাট বন্ধ কর’, ‘নগরের তাপমাত্রা প্রতিরোধে বৃক্ষ হত্যা বন্ধ কর’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীমের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক ওয়ালিউর রহমান, পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মাহবুব টুংকু, সদস্যসচিব নাজমুল হোসেন, রাজশাহী থিয়েটারের সভাপতি নিতাই কুমার সরকার, আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস, আদিবাসী নেতা সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, স্বপ্নচারী সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি রুবেল হোসেন, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জের সভাপতি শামীউল আলীম, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের শিক্ষা সংস্কৃতি ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক সবনাজ মোস্তারী, গ্রিন ভয়েস রাজশাহীর বিভাগীয় সহসমন্বয়ক আবদুর রহিম প্রমুখ।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, নানামুখী পরিবেশবিরোধী পদক্ষেপের জন্য খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখানে দিনে দিনে তীব্র তাপপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি, খরা এবং সেই সঙ্গে কৃষিতে অধিক রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে বাস্তুসংস্থান বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে। শুধু গ্রামে নয়, এর প্রভাব পড়ছে নগরেও। পুকুরের নগরী, সবুজ নগরী রাজশাহী এখন কংক্রিটের শহরে পরিণত হচ্ছে। সড়ক বিভাজকে বা অন্যান্য জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ফুলের গাছ রোপণ করা হচ্ছে। এসব সৌন্দর্য দরকার আছে। কিন্তু বড় বড় গাছ না থাকলে এখানে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিকভাবে হবে না। পাখির জন্য বৃক্ষ থাকছে না। শহরে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা পরিবেশবান্ধব নয়। এই অঞ্চলকে বাঁচাতে হলে প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা করেই উন্নয়ন করতে হবে। এরই মধ্যে মরুকরণ শুরু হয়ে গেছে, এভাবে চলতে থাকলে এখানে মানুষও থাকতে পারবে না।  

কর্মসূচিতে ছয়টি দাবির কথা তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিজমি সুরক্ষায় ভূমি পুনরুদ্ধার করা; বরেন্দ্র অঞ্চলের মরুময়তা ও পানিসংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করা; বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য বিশেষ ‘খরা তহবিল’ গঠন ও খরাপীড়িতদের জন্য ‘খরা ভাতা’ চালু করা; পুকুর-দিঘি, খাল-বিল-খাড়ি, হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা, জলাশয়-জলাধারগুলো সুরক্ষায় সেগুলোকে ভরাট বন্ধ, দখল-দূষণমুক্ত এবং লিজ প্রথা বাতিল করে তাতে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা; উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষসহ সব বৃক্ষ সুরক্ষা করা; শহরে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা, খেলার মাঠ নিশ্চিত করা এবং শহরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ‘নো সয়েল নীতি’ থেকে সরে এসে প্রকৃতিনির্ভর সমাধান ও উন্নয়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা।