বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজে ভর্তি নিয়ে প্রতারণা, তিন কর্মচারী আটক

  • একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় অনলাইন মেধাতালিকায় শিক্ষার্থীদের নাম ছিল না।

  • ভুয়া ভর্তির মাধ্যমে কলেজের তিন কর্মচারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।

বগুড়া জেলার মানচিত্র

কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় অনলাইন মেধাতালিকায় তাঁদের নাম ছিল না। কলেজের তিন কর্মচারী টাকা নিয়ে এ রকম ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করেন। দুই বছর পর এইচএসসি ফরম পূরণের জন্য তাঁদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছেন কর্মচারীরা।

গত বৃহস্পতিবার এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে কেন্দ্রে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন, প্রবেশপত্র আসেনি। ফলে তাঁরা পরীক্ষাও দিতে পারেননি। এ ঘটনা বগুড়ার বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের। এর ফলে ওই ২৫ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এদিকে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত কলেজের তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদের পর গতকাল বিকেলে কলেজ চত্বর থেকে কলেজের অফিস সহায়ক হারুনুর রশিদ ও আমিনুল ইসলামকে আটক করে র‍্যাব। র‍্যাবের অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যান আরেক অভিযুক্ত কর্মচারী আবদুল হান্নান। পরে তাঁকে আটক করে শাজাহানপুর থানা–পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে কেন্দ্রে গিয়ে ২৫ শিক্ষার্থী জানতে পারেন, প্রবেশপত্র আসেনি।

র‍্যাব-১২–এর বগুড়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মীর মনির হোসেন বলেন, সরকারি শাহ সুলতান কলেজে ভুয়া ভর্তি দেখিয়ে ২৫ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে দুই কর্মচারীকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুজন ভর্তি–বাণিজ্যে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম গতকাল রাত আটটার দিকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে তিন কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ওই ঘটনায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড এবং সরকারি শাহ সুলতান কলেজ প্রশাসন দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গত শুক্রবার রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ূন কবীরকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং একই দিন সরকারি শাহ সুলতান কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রধান আবদুল জলিলকে প্রধান করে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দুটি কমিটি গতকাল শনিবার কলেজে এসে তদন্ত শুরু করেছে। শিক্ষা বোর্ডের কমিটিকে ২১ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কলেজের কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কে কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল আলম বলেন, সরকারি কলেজে এইচএসসি ভর্তির জন্য আসনসংখ্যা অনুযায়ী অনলাইনে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি করা হয়। এর বাইরে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ নেই। কলেজের তিনজন কর্মচারী কিছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভুয়া রসিদ হাতে ধরিয়েছেন।

এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ফরম পূরণের টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্ত ভুয়া ভর্তি দেখানো শিক্ষার্থীরা কলেজের পরীক্ষার্থী না হওয়ায় প্রবেশপত্র আসেনি। তাঁরা পরীক্ষা দিতে এসে প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ও কলেজ প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গতকাল তদন্ত শুরু করেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ছাড়াও অভিযুক্ত কর্মচারীদের সঙ্গেও কথা বলেছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হলে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভুক্তভোগী অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কলেজের শিক্ষক পরিষদের অফিস সহায়ক হারুনুর রশিদ ও গ্রন্থাগারে পিয়নের দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক আবদুল হান্নান।

এ বিষয়ে হারুনুর রশিদ বলেন, ‘যা বলার তদন্ত কমিটির কাছেই বলব।’ আবদুল হান্নান সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের একজন রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি ২০২১ সালে শাজাহানপুর উপজেলার একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেন। শাহ সুলতান কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তির আবেদন করেও মেধা ও অপেক্ষামাণ তালিকায় স্থান না পাওয়ায় কলেজের পিয়ন হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই সময়ে ভর্তি ফি ২ হাজার ২০০ হলেও হান্নান ভুয়া রশিদ দিয়ে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর কলেজের বিভিন্ন ফি, পরীক্ষার ফি, ফরম পূরণ ফি ছাড়াও আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন খাতে ২ বছরে প্রায় ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কত স্বপ্ন ছিল! এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব। পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করব। জীবন থেকে দুই বছর ঝরে যাওয়ার পর জানলাম, আমাদের ভর্তিই করা হয়নি। এর দায় কলেজ প্রশাসনকেও নিতে হবে।’

এ সম্পর্কে সরকারি শাহ সুলতান কলেজের উপাধ্যক্ষ এবং কেন্দ্রসচিব রেজাউন নবী বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতারিত শিক্ষার্থীদের বিশেষ ব্যবস্থায় ভর্তি করানোর জন্যও কলেজ প্রশাসন সুপারিশ করবে।