দরজা–জানালায় ঘুণ, খসে পড়ছে চুন–সুরকিও 

সংস্কারের অভাবে কুঠিবাড়িটি ফিকে হয়ে যাচ্ছে। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নতুন করে সংস্কারের দাবি জানান স্থানীয় লোকজন।

কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে ভেঙে গেছে জানালার একাংশ। ফেটে গেছে দেয়ালের রং, খসে পড়েছে পলেস্তারা। গত বুধবার বিকেলে
প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কুঠিবাড়িতে কাঠের দরজা-জানালায় ঘুণ ধরেছে। দেয়ালের চুন–সুরকিও খসে পড়ছে। ভেঙে পড়েছে দুইটি ব্যালকনি ও জানালার কাঠের কিছু অংশ। দোতলায় একসঙ্গে বেশি দর্শনার্থী উঠলে কাঁপতে থাকে। চটে গেছে রং। ফিকে হয়ে যাচ্ছে জৌলুশ। কর্তৃপক্ষ বলছে, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় প্রায় পাঁচ থেকে সাত বছর সংস্কার করা হয়নি কুঠিবাড়িটি।

কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ানের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৯১ সালে বাবার আদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা থেকে জমিদারি তদারকের কাজে শিলাইদহে এসেছিলেন। সে সময় তিনি বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পুরোনো কুঠিবাড়িতে বাস করতেন। পরে পদ্মার ভাঙনে পুরোনো কুঠিবাড়ির নিকটবর্তী এলাকা পর্যন্ত বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে পুরোনো বাড়িটি ভেঙে নতুন কুঠিবাড়ি নির্মাণ করা হয় ১৮৯২ সালে। ওই বাড়ি তৈরির দায়িত্বে ছিলেন কবির জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র নীতিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর। পরে কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাড়িটির বর্তমান রূপ দেন। প্রায় ১৫ দশমিক ৯৩ একর জমির কুঠিবাড়িতে আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য চিরসবুজ বৃক্ষের বাগান রয়েছে। আছে পুষ্পোদ্যান, চারটি পুকুরসহ মনোরম পরিবেশ।

গত অর্থবছরে সরকার কুঠিবাড়ি থেকে রাজস্ব পেয়েছে প্রায় ৩২ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪০ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে অর্জন হয়েছে প্রায় ৩৯ লাখ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রাজস্ব আদায় হবে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, অপূর্ব কারুকাজসমৃদ্ধ দোতলা কুঠিবাড়ি ভবনের দেয়াল ও ছাদের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা খসে পড়েছে। প্রায় ১০টি জানালা ও ৭টি দরজার চৌকাঠে ঘুণ লেগেছে। দুইটি ব্যালকনি ও কয়েকটি জানালার অংশবিশেষ ভেঙে গেছে। চটে গেছে ভবন ও সীমানাপ্রাচীরের রং। দেশ–বিদেশ থেকে প্রতিদিনই শতাধিক দর্শনার্থী কুঠিবাড়িতে বেড়াতে আসেন। কিন্তু সংস্কারের অভাবে কুঠিবাড়িটি ফিকে হয়ে যাচ্ছে। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নতুন করে সংস্কারের দাবি জানান স্থানীয় লোকজন।

বুলবুল আহমেদ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, কুঠিবাড়িটি ঘুরে দেখেছেন। খুব ভালো লেগেছে। তবে ভবনে কম্পন সৃষ্টি হওয়ায় ভয়ে দ্বিতীয় তলায় ওঠেননি তিনি।

শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান আল আমিন বলেন, বরাদ্দ না থাকায় প্রায় পাঁচ-সাত বছরে সংস্কার হয়নি কুঠিবাড়িতে। একসঙ্গে বেশি দর্শনার্থী দোতলায় উঠলে ভবনে কম্পন সৃষ্টি হয়।

এদিকে এই কুঠিবাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত পরিত্যক্ত কাছারিবাড়িতে প্রথমবারের মতো সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে কাছারিবাড়ির এক-চতুর্থাংশ সংস্কার করা হবে। বরাদ্দ পেলে দুই-তিন অর্থবছরে পুরো বাড়ির সংস্কারকাজ করা হবে।