‘অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর পরিবারকে কাউন্সেলিং করা দরকার’

‘নিরাপদ হাতে সফল পরিণতি, নারীদের অস্ত্রোপচারে আঘাত দূরে রাখি’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওমর ফারুক ইউসুফের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। আজ বেলা ২টায় হোটেল র‍েডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউর মেজবান হলেছবি: প্রথম আলো

অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসাবিদ্যার নীতি ও নৈতিকতা মেনে চলতে হবে। তাই এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সতর্ক হতে হবে। জেনেবুঝে অস্ত্রোপচার করতে হবে। অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর পরিবারকে বারবার কাউন্সেলিং করা দরকার। কোনো চিকিৎসক যদি অন্যায় করেন, এর দায়দায়িত্ব তাঁকে নিতে হবে।

‘নিরাপদ হাতে সফল পরিণতি, নারীদের অস্ত্রোপচারে আঘাত দূরে রাখি’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) উদ্যোগে বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

আজ বুধবার চট্টগ্রাম নগরের এস এস খালেদ সড়কের র‍্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ হোটেলের মেজবান হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। রেনাটা পিএলসির সহযোগিতায় সেমিনারে অনলাইন ও অফলাইন মিলিয়ে প্রায় তিন হাজারের বেশি চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওমর ফারুক ইউসুফ বলেন, ‘আমরা (চিকিৎসক) প্রায়ই জীবনে অপ্রত্যাশিত ও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার মুখোমুখি হই। আপনারা অনেকেই নিজের জীবনে এমন অভিজ্ঞতা পেয়েছেন নিশ্চয়ই। চিকিৎসা পেশায় এসব ঘটনার মুখোমুখি হওয়া প্রায় অনিবার্য।’

উপাচার্য ওমর ফারুক ইউসুফ বলেন, যদি কারও মৌলিক অভিজ্ঞতা থাকে, তবে ইনজুরি শনাক্ত করা ও প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর পরিবারকে কাউন্সেলিং করা দরকার।

উপাচার্য তরুণ সার্জনদের উদ্দেশে বলেন, ‘পেশাগত জীবনে সতর্ক থাকুন, দায়িত্বশীল থাকুন। এখনকার যুগে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ভ্রান্ত তথ্য ছড়ায়, তাই দ্বিগুণ সতর্কতা দরকার। সব সময় অপারেশনের আগে রোগীর অবস্থা ভালোভাবে রিভিউ (পর্যালোচনা) করুন। আপনি হয়তো ১০০ বার একই অপারেশন করেছেন, কিন্তু প্রতিবারই আলাদা ঝুঁকি থাকে। যদি কখনো ইনজুরি হয়—মনে রাখবেন, এটা ইচ্ছাকৃত নয়; বরং একটি দুর্ঘটনা। যে সার্জনের কোনো জটিলতা নেই, সে–ই সেই সার্জন, যে কখনো অপারেশনই করে না। তাই জটিলতা আসবেই, কিন্তু লজ্জা না পেয়ে সাহায্য চাইতে হবে।’

সেমিনারে সম্মানিত অতিথি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাজমুল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি তৎপর। বেশ কয়েকজন চিকিৎসক শাস্তি পেয়েছেন। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে চরম অবহেলার কারণে তাঁরা এই শাস্তি পেয়েছেন। চিকিৎসকদের মনে রাখতে হবে, সবাইকে একদিন রোগী হতে হবে। একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে রোগীরা মানবিকতা আশা করেন।

সেমিনারে আগত অতিথি ও চিকিৎসকেরা
ছবি: প্রথম আলো

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ফিরোজা বেগম বলেন, সার্জারির ক্ষেত্রে চিকিৎসার মূলনীতি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সার্জারি জেনেই সার্জারি করতে হবে। কেউ অন্যায় করলে, অপরাধ করলে সমিতি তাঁর পাশে থাকবে না।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ও উপাধ্যক্ষ মো. আবদুর রব, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন। ওজিএসবি চট্টগ্রামের সভাপতি কামরুন নেসার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন ওজিএসবির সদস্যসচিব মোসারাত সুলতানা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও ওজিএসবি চট্টগ্রামের যুগ্ম সম্পাদক ফাহমিদা ইসলাম চৌধুরী। এতে বক্তব্য দেন রেনাটা পিএলসির মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মো. শাখাওয়াত হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের কনসালট্যান্ট মির্জা মো. আসাদুজ্জামান।