ঝালকাঠিতে সালিসে বসে সংঘর্ষে জড়াল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষ, আহত ১৫

ঝালকাঠি জেলার মানচিত্র

ঝালকাঠিতে পারিবারিক বিরোধ সমাধানের সালিস বৈঠকে বসে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুইপক্ষের নেতা–কর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দুই দফা সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ কয়েকটি রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গতকাল রাত ১১টার দিকে ঝালকাঠি শহরের হোগলা পট্টি এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহের বাসভবনে প্রথম দফায় সংঘর্ষ হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় রাত পৌনে ১২টার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের ঘটনায় পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমানসহ (৩৫) চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকি তিনজন হলেন সাকিব (২৫), মুন্না (৩৫) ও কালু (৩৫)। তাঁদের দলীয় পরিচয় পাওয়া যায়নি।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী সোহরাব হাওলাদার ও সুলতান হাওলাদারের মধ্যে তিন দিন আগে একটি পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। তাঁরা পরস্পরের আত্মীয় হন। এই বিরোধ সমাধানে গতকাল রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহর বাসভবনে সালিস বৈঠক বসে দুইপক্ষ। ব্যবসায়ী সুলতান হাওলাদারের ছেলে নুরুন্নবী লিসান (২৯) জেলা ছাত্রলীগের সদস্য হওয়ায় তাঁর পক্ষে অবস্থান নেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম ওরফে পারভেজ ও তাঁর ভাই রফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক খলিফা সালিস বৈঠকে সোহরাব হাওলাদারের ছেলে জিহাদ হাওলাদারের পক্ষে অবস্থান নেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের শুরু হতেই আবদুল হক খলিফার দুই ছেলে আমিন খলিফা ও রাজিব খলিফা হাতুড়ি দিয়ে খান সাইফুল্লাহর বৈঠকখানার টেবিলের গ্লাস ভেঙে ফেলেন। এরপর আমিন খলিফা ছাত্রলীগ নেতা তরিকুল ইসলামের ভাই রফিকুল ইসলামের গালে–মুখেও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে সেখান থেকে উভয় পক্ষকে বের করে দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ।

এ ঘটনার জের ধরে রাত পৌনে ১২টার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় আবদুল হক খলিফার লোকজন জড়ো হয়ে সুলতান হাওলাদারের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ ও পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে প্রায় ১৫ জন আহত হয়। তাঁদের মধ্যে চারজনকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুরুতর আহত রফিকুল ইসলামকে বরিশাল শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক খলিফা বলেন, ‘প্রতিপক্ষরা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’

সুলতান হাওলাদারের ছেলে নুরুন্নবী লিসান বলেন, সালিস বৈঠকে হামলা শেষে দ্বিতীয় দফায় হক খলিফা ও তাঁর দুই ছেলে আমিন ও রাজিব খলিফার নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা তাঁদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বলেন, একটি সালিস বৈঠকে বসে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সামনে তাঁর ভাইকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন আবদুল হক খলিফার দুই ছেলে। এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, এ ঘটনা এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনা তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।