নোয়াখালীতে তিন মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ  

নোয়াখালীতে গত তিন মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বৃহস্পতিবার নারী অধিকার জোটের সংবাদ সম্মেলন
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীতে গত তিন মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। একই সময় বেড়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় আদালতে মামলার হারও। নোয়াখালী নারী অধিকার জোটের এক নাগরিক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন, তিন মাসে জেলার ২৬ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জানুয়ারি থেকে মার্চে এ সংখ্যা ছিল ১৩ জন।

গত তিন মাসে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এ উপলক্ষে জেলা শহর মাইজদীর একটি রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভাপতি লায়লা পারভীন।

প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে লায়লা পারভীন বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া মামলার তথ্য অনুযায়ী গত তিন মাসে নোয়াখালীতে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনার আগের তিন মাসের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যাসহ নানা ধরনের সহিংসতার ঘটনা নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতার বহিঃপ্রকাশ, যা নারী অধিকার জোটকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। গত ১৪ জুন জেলা শহরে বাসায় ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা নাগরিক সমাজকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এ ঘটনায় আলতাফ হোসেন নামের একজন গ্রেপ্তার হলেও ঘটনার প্রকৃত রহস্য এখনো জানা যায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন মাসে নির্যাতিতদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০ জন নারী ও শিশু। যাঁদের বয়স ৪-২৮ বছরের মধ্যে। অপহৃত হয়েছে তিনজন বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্রী। আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে পাঁচটি, মাদ্রাসাশিক্ষক দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক শিশু। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এক নারীকে। আর দিনের বেলায় বাসায় ঢুকে মা ও মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে একটি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত তিন মাসে জেলার দুটি নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১৯০টি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১-এর অধীন সদর, বেগমগঞ্জ, চাটখিল, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগ উপজেলা থেকে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে ১৩৫টি। আর ট্রাইব্যুনাল-২-এর অধীন কবিরহাট, সোনাইমুড়ী, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলা থেকে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫৫টি। নারীর প্রতি সহিংসতার এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই তিন মাসে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে। এর আগে জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসে আদালতে মামলা হয়েছিল ১৫৭টি।

নারী অধিকার জোটের উপস্থাপন করা প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে এলেই থানা-পুলিশ মামলা গ্রহণ করে। সে ক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে মনে হতে পারে। তবে জেলা পুলিশ বরাবরই নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করে এবং এ বিষয়ের মামলা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে। এ ছাড়া অভিযুক্তদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করা হয়।

নতুন আঙ্গিকে নারীর প্রতি সহিংসতা সংগঠিত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঘরে-বাইরে, রাস্তাঘাটে, গণপরিবহনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোথাও নারী নিরাপদ নন। স্বামীর বাড়িতে গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা কিংবা নারীর মানসিক সমস্যা বলা হচ্ছে, নেওয়া হচ্ছে অপমৃত্যুর মামলা। এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন। সত্যিই কি আত্মহত্যা নাকি খুন করে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। নারী যাতে ঘরে-বাইরে, রাস্তাঘাটে, গণপরিবহনে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারেন, সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নোয়াখালী পল্লি উন্নয়ন সংস্থার (এনআরডিএস) নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল, নারী অধিকার জোটের সদস্য ও বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য রৌশন আক্তার ওরফে লাকি, সদস্য ফৌজিয়া সুলতানা, মিনু আরা, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গোলাম আকবর প্রমুখ।