মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীর মাটি কেটে বিক্রি

ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন ওই মাটি কেটে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে ইছামতী নদী থেকে মাটি কেটে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। গত রোববার দুপুরে উপজেলার কাতরাসিন গ্রামে।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার কাতরাসিন গ্রামে ইছামতী নদী থেকে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় উথলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল মান্নান ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন ওই মাটি কেটে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে উপজেলা প্রশাসন জানায়, নদী থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই।

নদী থেকে মাটি কাটার অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. বেলাল হোসেন, ইউএনও, শিবালয়

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় যমুনা নদী এসে নাম হয়েছে ইছামতী নদী। এই নদী উথলী হয়ে হরিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে গিয়ে মিশেছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ইউপি সদস্য মান্নান ও যুবলীগ নেতা ফারুক অবৈধভাবে নদী থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে তা আশপাশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাত নয়টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত সারা রাত মাটি কেটে ট্রাকে করে এলাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে দিনের বেলায় মাটি কাটা বন্ধ রাখা হয়।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, কাতরাসিন এলাকায় নদীর যে অংশে মাটি হয়েছে, সেখানে বিশাল কয়েকটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পাড়েই ভেকু রাখা হয়েছে। এসব মাটি কিনে গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি তাঁদের নিচু জায়গা ও ডোবা ভরাট করা করছেন।

স্থানীয় কাতরাসিন গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিক খান বলেন, গত বছরও ওই স্থানে নদী থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হয়। এবারও রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সেখানে নদী থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে।

রাস্তা মেরামতের কথা বলে ইউপি সদস্য মান্নান ও যুবলীগের নেতা ফারুক আশপাশের বিভিন্ন স্থানে এসব মাটি বিক্রি করছেন। গত রোববার সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে লোকজন এসে রাস্তার মাঝখানে খুঁটি লাগিয়ে যান যাতে মাটিবাহী ট্রাক চলাচল করতে না পারে। কিন্তু রাতে এসব খুঁটি উঠিয়ে ট্রাকে করে নদীর মাটি বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়। ভোরে মাটি ব্যবসায়ীরা রাস্তায় আবার সেই খুঁটি পুঁতে রাখেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নদী থেকে মাটি কেটে বিক্রি বা প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমোদন লাগবে। নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা ও পরিবহন বন্ধে ট্রাক চলাচলের রাস্তায় খুঁটি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। পরে খুঁটি উঠিয়ে নদীর মাটি কেটে অন্যত্র নেওয়া হয়েছে কিনা, তা তাঁর জানা নেই।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এলাকার একটি রাস্তা মেরামতের নামে ভেকু দিয়ে নদী থেকে মাটি কাটা হয়। তবে শ্রমিকের বদলে নদী থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা ভরাটের কাজ করা হয়। পরে নদী থেকে রাতভর মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রাকে করে এসব পরিবহন করায় ধুলাবালুতে আশপাশের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মসজিদে ছড়িয়ে পড়ছে। যাঁরা মাটি কাটছেন তাঁরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, নদী থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কারণে বর্ষাকালে আবাদি জমিসহ বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীতে গোসল করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে বলে এলাকাবাসীদের জানান মাটি ব্যবসায়ীরা।

ইউপি সদস্য মান্নান বলেন, কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ১৪ টন চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়। উথুলী বালিকা বিদ্যালয়সংলগ্ন রতিনের বাড়ি থেকে মীর ফেরদৌস হোসেনের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত করা হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়ে প্রকল্পের রাস্তায় নদী থেকে মাটি কেটে সেখানে ফেলা হয়। অন্য কোথাও মাটি বিক্রি করা হয়নি।

যুবলীগের নেতা ফারুক বলেন, রাস্তার মেরামতের নামে অন্যত্র মাটি বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়।

উথুলীর ইউপি চেয়ারম্যান আব্বাস আলী বলেন, নদীর মাটি কে কাটছেন তা তিনি জানেন না।

এ বিষয়ে ইউএনও মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘নদী থেকে মাটি কাটা ও বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। যেকোনো প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের জন্য সরকার বরাদ্ধ দেয়। নদী থেকে মাটি কাটার অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’