১৫ টাকা কেজি চালের জন্য নাম তুলতে ১০০-৭০০ টাকা আদায়ের অভিযোগ

চাল
ফাইল ছবি

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের তথ্য অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করতে তাঁদের কাছ থেকে ১০০ থেকে ৭০০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার গোসাইবাড়ি ও ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের উপকারভোগীদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়ে ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত খোঁজখবর করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। এর ভিত্তিতে তিনি দুজনকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে দেওয়া এই নোটিশের জবাব তিন কার্যদিবসের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন গোসাইবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল করিম এবং ভান্ডারবাড়ি ইউপির ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নাসিমা খাতুন। তবে তাঁরা ওই উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ধুনট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ এই স্লোগান বাস্তবায়নে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৫০৯ জন হতদরিদ্র মানুষকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। বছরে পাঁচ মাস ১৫ টাকা কেজি দরে (পুনর্নির্ধারিত মূল্য) তালিকাভুক্ত উপকারভোগীরা ৩০ কেজি করে চাল পান। গত ১৩ জুন খাদ্য অধিদপ্তর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা নতুন করে হালনাগাদ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে একটি তথ্যভান্ডার প্রণয়নের জন্য সরকারিভাবে একেকজন উপকারভোগীর তথ্য অনলাইনে তোলা বাবদ ১৫ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়। গত ২৩ আগস্ট পর্যন্ত উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৬ হাজার ৫৪৫ জন উপকারভোগীর নাম অনলাইনে উঠেছে বলে জানা গেছে।

উদ্যোক্তাসহ অফিসের খরচ বাবদ সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কেউ আদায় করে থাকলে তাঁর দায়িত্ব আমি নিতে পারব না।
বেলাল হোসেন, ভান্ডারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান

কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্যরা সরকারি এ আদেশ অমান্য করে অনলাইনে নাম তোলার নামে একেকজন উপকারভোগীর কাছ থেকে ১০০ থেকে ৭০০ টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা। এর মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যানের নামে ১০০ থেকে ২০০ টাকা, বাকি টাকা সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের নামে নেওয়া হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কথা হয় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বেশ কয়েকজন উপকারভোগীর সঙ্গে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জোড়খালী গ্রামের আমেনা খাতুন, পিয়ারা খাতুন, নুরজাহান; পশ্চিম গুয়াডহুরী গ্রামের জহুরা, নাজনিন এবং চিতুলিয়া গ্রামের আয়নাল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কাছ থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করার নামে ইউপি সদস্য আবদুল করিম ওরফে কিনু মেম্বার ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা করে নিয়েছেন। কিন্তু এখনো তাঁদের কার্ডগুলো ফেরত দেননি।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের নাম অনলাইনে তোলার জন্য টাকা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই।
সঞ্জয় কুমার মহন্ত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ধুনট

গোসাইবাড়ি ইউপির ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সামাউন হাসান বলেন, ‘সুবিধাভোগীদের ডেটাবেজ করতে আমি টাকা আদায় করছি না। তবে চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা কী করছেন, তা আমি জানি না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবদুল করিম দাবি করেন, সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি তিনি। তালিকাভুক্ত সদস্যরা শত্রুতাবশত তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। সময়ের মধ্যেই কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করবেন তিনি।

গোসাইবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হকও বলেন, ‘উপকারভোগীদের কাছ টাকা নেওয়ার অভিযোগ সঠিক না। আমার নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।’

একই দিন ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নেও কথা হয় কয়েকজন উপকারভোগীর সঙ্গে। ওই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছানোয়ার হোসেন, আলতাব হোসেন, আবদুর রশিদ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রিনা রানী প্রথম আলোকে বলেন, ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নাসিমা খাতুন তাঁদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নিয়ে অনলাইনে নাম তুলে দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভান্ডারবাড়ি ইউপির ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা নাসিমা খাতুন বলেন, ‘চেয়ারম্যান যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমি শুধু তা বাস্তবায়ন করছি।’

এ ব্যাপারে ভান্ডারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বলেন, ‘উদ্যোক্তাসহ অফিসের খরচ বাবদ সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি কেউ আদায় করে থাকলে তাঁর দায়িত্ব আমি নিতে পারব না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির উপকারভোগীদের নাম অনলাইনে তোলার জন্য টাকা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। খবর পেয়ে দুজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।