অভয়নগরে পুড়িয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি পরিদর্শনে নাগরিক প্রতিনিধিদল, নিরাপত্তা ও বিচার নিশ্চিতের দাবি

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রাম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাগরিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে পুড়িয়ে দেওয়া হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বাড়িগুলো পরিদর্শন করেছে ঢাকার একটি নাগরিক প্রতিনিধিদল। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িগুলো পরিদর্শনের পর প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি দোষীদের বিচারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

গত ২২ মে সন্ধ্যায় উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের একটি বাড়িতে কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামকে (৫০) কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। তিনি উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি ছিলেন। তাঁকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে একদল লোক ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের অন্তত ২০টি হিন্দুবাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া উপজেলার সুন্দলী বাজারে দুটি দোকানে অগ্নিসংযোগ এবং চারটি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় আহত হন অন্তত ১০ জন।

আজ দুপুরে পরিদর্শনে এসে নাগরিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের শিকার কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামের বাড়িতে যান। সেখানে তাঁরা নিহতের ভাই এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলোও ঘুরে দেখেন এবং ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িগুলো ঘুরে দেখেন নাগরিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। আজ দুপুরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

প্রতিনিধিদলে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, নারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য, মানবাধিকারকর্মী দীপায়ন খীসা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি দীপক শীল, অধিকারকর্মী ও আইপিনিউজের নির্বাহী সম্পাদক সতেজ চাকমা।

আরও পড়ুন

সাংবাদিক ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজের পর্যবেক্ষণ জানিয়ে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘যে কৃষক দল নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে সেটা খুবই নিন্দনীয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন। এই নিন্দনীয় ঘটনার পর যে গরিব ও নিরীহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দিয়ে সর্বস্বান্ত করা হয়েছে, তা খুবই নির্মম। আমরা লক্ষ করেছি, হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী নিরীহ মানুষজন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমরা প্রত্যাশা করি, স্থানীয় প্রশাসন তাঁদের নিরাপত্তা এবং ত্রাণ দিয়ে তাঁদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে।’

রোবায়েত ফেরদৌস আরও বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে, এ হত্যাকাণ্ড ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করি এবং একই সঙ্গে নিরীহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা দেখলাম, যাঁদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁরা এখন সর্বস্বান্ত। এ গ্রামের ২০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, তাদের গরু চুরি এবং কিছু গরু মারাত্মকভাবে আহত ও শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন, গ্রামের প্রতিটি বাড়ি ও দোকানগুলোতে লুটপাট এবং বিপুল পরিমাণ ধান নষ্ট করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি আমরা লক্ষ করলাম সে পরিমাণ ত্রাণসহায়তা তাঁরা পাচ্ছেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে সেটা খুবই নগণ্য। আমরা আশা করি, প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন।’

নারী ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের বিগত ৫৩ বছরে ক্ষমতাবান জনগোষ্ঠী সব সময় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করেছে। ক্ষমতার পালাবদলে কিংবা ক্ষমতা ও আধিপত্যের দ্বন্দ্বে ভুক্তভোগী হয় জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। প্রশাসন আক্রান্ত পরিবারগুলোর নিরাপত্তা, বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন