সময়ের মুখ
এতগুলো টাকা পেয়ে অবাক হই, প্রতারণার সন্দেহও হয়
মুঠোফোনে চার দফায় এক লাখ টাকা আসার খুদে বার্তা দেখে চমকে উঠেছিলেন পারভেজ তালুকদার (২৪)। পরে বুঝতে পারেন, কেউ টাকাগুলো ভুল করে পাঠিয়েছে। মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রতিনিধিও ফোনে ভুল করে টাকা পাঠানোর বিষয়টি জানান। ২৪ মে স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে টাকাগুলো প্রকৃত প্রাপকের হাতে তুলে দেন পারভেজ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাফসিলুল আজিজ।
প্রশ্ন :
কেমন আছেন?
পারভেজ: ভালো।
প্রশ্ন :
যখন আপনার মুঠোফোনে এতগুলো টাকা আসে, তখন কী ভেবেছিলেন?
পারভেজ: শুরুতে ভাবছিলাম, টাকাগুলো কোথা থেকে এল। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম। পরে মনে হলো, এই টাকা কীভাবে ফেরত দেব। আবার সন্দেহ হলো, কেউ প্রতারণা করছে কি না। এখন তো প্রতারণার অনেক ঘটনা ঘটে।
প্রশ্ন :
অন্য কাউকে কিছু জানিয়েছিলেন?
পারভেজ: আমার বড় বোনকে জানিয়েছিলাম।
প্রশ্ন :
আপনি তো ২৩ মে রাতে টাকাগুলো পান। বিকাশের প্রতিনিধির ফোন এল কখন?
পারভেজ: পরদিন সকালে। তার আগে আমি যে নম্বর থেকে টাকা এসেছে, সেই নম্বরে কয়েক দফা ফোন করেছি। কেউ ধরেনি। ফোন আসার পর আমি তাদের কাছে প্রমাণ চাই।
প্রশ্ন :
তারপর?
পারভেজ: আমি বিকাশ এজেন্টকে বলেছি প্রকৃত প্রাপককে আমার নম্বরে ফোন করতে। এভাবে প্রকৃত মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।
প্রশ্ন :
যে নম্বরে টাকা পাঠানোর কথা, সেই নম্বর আর আপনার নম্বরের কি মিল আছে?
পারভেজ: শুধু একটি অঙ্ক ভিন্ন। বাকিটা এক।
প্রশ্ন :
টাকা তো পাঠানো হয়েছিল আবদুস সালাম নামের এক ব্যক্তিকে। তাঁর ছেলে বিদেশ থেকে পাঠিয়েছিলেন।
পারভেজ: হ্যাঁ।
প্রশ্ন :
আবদুস সালামকে আপনি কী বলেছিলেন?
পারভেজ: আমি তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম তিনি টাকা নগদে নেবেন, নাকি বিকাশে দেব।
প্রশ্ন :
আবদুস সালাম কী বললেন?
পারভেজ: উনি নগদ চাইলেন। বললেন এজেন্টের কাছে গিয়ে উঠিয়ে দিতে।
প্রশ্ন :
আপনি যখন আবদুস সালামের হাতে টাকা বুঝিয়ে দেন, তখন তিনি কী বলেছিলেন?
পারভেজ: তিনি বলেছিলেন, এই যুগে ২০ টাকা ভুলে পাঠালে কেউ ফেরত দিতে চায় না। আমি এক লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি। উনি ওনার বাড়িতে আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন।
প্রশ্ন :
নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন?
পারভেজ: করেছি। তবে যেতে পারিনি। পরে যাব, পরীক্ষা শেষ হলে।
প্রশ্ন :
কোথায় পড়েন?
পারভেজ: কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে (স্নাতক) চতুর্থ বর্ষে। আমাদের বাড়ি পাকুন্দিয়ায়।
প্রশ্ন :
আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
পারভেজ: মা, চার বোন ও দুই ভাই। বাবা বেঁচে নেই।
প্রশ্ন :
পড়াশোনার খরচ কই পান?
পারভেজ: আমি টিউশনি করি। মাসে চার-পাঁচ হাজার টাকা আয় হয়। নিজের খরচের পাশাপাশি পরিবারে দিই। আমার টিউশনি ও বাবার পেনশনের (অবসর ভাতা) যে টাকা মা পান, তা দিয়ে সংসার চলে।
প্রশ্ন :
টাকা ফেরতের পর আপনাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেটা দেখে কেউ কিছু বলেছে?
পারভেজ: প্রতিবেদন দেখেছি। কমেন্টও (মন্তব্য) পড়েছি। খুব ভালো লাগছে। সারা দিনই ফোন এসেছে। সবাই প্রশংসা করেছে।
প্রশ্ন :
আর কখনো বিকাশে ভুল করে টাকা এসেছিল?
পারভেজ: দুই বছর আগে ১০ হাজার টাকা এসেছিল। সেটা ফেরত দিয়েছি।
প্রশ্ন :
যদি বৈধভাবে এক লাখ টাকা পেয়ে যান, কী করবেন?
পারভেজ: মায়ের চিকিৎসা করাব। তাঁর হৃদ্রোগের ভালো চিকিৎসা দরকার।