হলদে শর্ষের বিস্তীর্ণ খেতে শুধু মৌমাছির গুঞ্জন
সড়কের দুপাশে যত দূর চোখ যায়, কেবল হলুদের সমারোহ। হলদে শর্ষে ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা এখানে-সেখানে মধু আহরণে ব্যস্ত। ফুলের মিষ্টি গন্ধ আর মৌমাছিদের গুঞ্জনে মুখর পুরো এলাকা। শেরপুরের নকলা উপজেলার পশ্চিম উরফা গ্রামে সম্প্রতি এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।
কৃষি বিভাগ জানায়, জেলার পাঁচ উপজেলাতেই এবার শর্ষের আবাদ ভালো হয়েছে। মাঠভরা ফুল দেখে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন তাঁরা। ধান ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা দিন দিন শর্ষে চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
কিষান ও কিষানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক একর জমিতে শর্ষে চাষে খরচ পড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তিন মাস মেয়াদি এই আবাদে একরপ্রতি গড়ে ১৫ থেকে ১৭ মণ শর্ষে পাওয়া যায়। মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রতি মণ শর্ষে বিক্রি হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দরে। এতে খরচ বাদ দিয়ে একরপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে। তবে শর্ষে চাষে তুলনামূলকভাবে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার একটু বেশি করতে হয়। শর্ষে তোলার পর ওই জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়। ওই সময় সার ও কীটনাশকের তুলনামূলক কম প্রয়োজন হয়।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ১৯ হাজার ২৬৪ হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর, নকলা উপজেলায় ৫ হাজার ৯৯৫ হেক্টর, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ১৬৫ হেক্টর, শ্রীবরদী উপজেলায় ৪ হাজার ২৫৮ হেক্টর এবং ঝিনাইগাতী উপজেলায় ৯৯৫ হেক্টর জমিতে শর্ষে চাষ করা হয়েছে।
নকলা উপজেলার বারমাইশা গ্রামের কৃষক সেকান্দর আলী বলেন, ‘গত বছর নিজ খেতের শর্ষের বীজ সংগ্রহ করছি। এবার সেই বীজে ৫০ শতক জমিতে শর্ষে আবাদ করেছি। ফুল ভালো ধরেছে।’
নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শর্ষের আবাদ শুরু হয় এবং প্রায় ৯০ দিনের মধ্যেই ফসল কাটা যায়। এ ফসলে সেচের প্রয়োজন পড়ে না এবং চাষের খরচও তুলনামূলক কম। শর্ষে চাষে তেল, খৈল ও খড় পাওয়া যায়—যা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। পাশাপাশি জমির মাটির উর্বরতা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পায়, ফলে কৃষকেরা শর্ষে চাষে দারুণভাবে লাভবান হন।
এবারের মৌসুমে কৃষকদের মধ্যে উন্নতমানের শর্ষের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে দাবি করে শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার শর্ষের ফলন ভালো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
নকলা উপজেলার পশ্চিম উরফা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শর্ষের হলুদ ফুলে মাঠঘাট যেন নতুন সাজে সেজেছে। মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। ফুলের গন্ধে চারপাশে মৌমাছির আনাগোনা বেড়েছে। সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পথচারীরা দাঁড়িয়ে এই হলুদ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। অনেকেই তুলছেন ছবি ও সেলফি।
ধানের চেয়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরের মতো এবারও শর্ষের আবাদ করেছেন বলে জানান গ্রামটির কৃষক ফিরুজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি এক একর জমিতে শর্ষের চাষ করেছি। মাঠে বেশ ভালো ফুল এসেছে। আশা করছি ফলন ভালো হবে।’