টানা ১৪ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

চুয়াডাঙ্গায় ধান সিদ্ধ করার পাত্র মাথায় দিয়ে রোদের তাপ থেকে রক্ষা পেতে চাইছেন একজন কৃষক। শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বছরের প্রথম অতি তীব্র দাবদাহ বয়ে চলেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে চুয়াডাঙ্গায়, ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২ এপ্রিল থেকে টানা ১৪ দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে জেলায়।

স্বাভাবিক সময়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালালেও এক সপ্তাহ ধরে বেলা ১১টায়ই বাড়িতে ঢুকে যান চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রিকশাচালক আবদুর রশিদ।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে তাপ বাড়ছে, তাতে শরীল পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্চে। দিনি দুইবার ছ্যান (স্নান) করেও দেহে শান্তি পাচ্চিনে। অ্যারাম হলি জীবন বাঁচানিই দায় হয়ে যাচ্চে।’

স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আজ (শনিবার) চুয়াডাঙ্গা জেলায় যে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, তা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া চলতি বছরে ২ এপ্রিল থেকে আজ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১৪ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ডও চুয়াডাঙ্গায়। ২ এপ্রিল জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল, ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এরপর থেকে ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১২ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৩ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৪ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ ১৫ এপ্রিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

আগামী বুধবার পর্যন্ত তাপমাত্রা প্রতিদিন এভাবে বাড়তে থাকবে জানিয়ে রাকিবুল হাসান আরও বলেন, চলতি মৌসুমে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে যাবে।
জেলার অন্তত ৩০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেন, তীব্র দাবদাহের কারণে জেলার জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর হাঁসফাঁস অবস্থা।

সাবেক শিক্ষক ও শহরের মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা শাহনেওয়াজ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ দিন ধইরে মনে হচ্ছে, সূর্য মাথার ওপর নেমে এসেছে। মুহূর্তেই ঘেমে একাকার। শুধু নামাজের সময় ছাতা মাথায় দিয়ে বাড়ি থেকে মসজিদ আর মসজিদ থেকে বাড়িতে যাই। খুব জরুরি না হলে বাইরে বের হচ্ছি না।’

২০০২ সালে চুয়াডাঙ্গায় প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর থেকে সর্বশেষ রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ৫২ বছরের মধ্যে জেলার সর্বোচ্চ। আজ শনিবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও পরের বছর ২০১৫ সালে তা বেশ নেমে যায়। ওই বছরের ২২ মে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি। ২০১৬ সালে ১১ ও ২২ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ২০১৮ সালের ১৮ জুন ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি, ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি, ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি, ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ২০২২ সালের ২৪ ও ২৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।