হাতিয়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নৌ অ্যাম্বুলেন্স সাত মাসেও সচল হয়নি

নোয়াখালীর হাতিয়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। শনিবার সকালে উপজেলার নলচিরা ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াখালীর হাতিয়া স্বাস্থ্য বিভাগের একমাত্র নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘ প্রায় সাত মাসেও মেরামত করা হয়নি। অচল অবস্থায় নলচিরা ঘাটে পড়ে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি। ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জেলা সদরে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।

নতুন করে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে যাচ্ছে উপকূলে। এ অবস্থায় অচল নৌ অ্যাম্বুলেন্সটির কথা নতুন করে আলোচনায় আনেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

মাসখানেকের মধ্যে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করা যাবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক সুমেন সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অচল নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি সচল করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এটি মেরামতের জন্য জেলা সিভিল সার্জনের কাছ থেকে একটি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ওই বরাদ্দ দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের পাশাপাশি এর জ্বালানি খরচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আউটসোর্সিং খাত থেকে একজন চালককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, অচল হয়ে পড়ে থাকার কারণে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থেকে কিছু যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। নতুন করে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাত থেকে রক্ষা পেতে এরই মধ্যে নৌ অ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিন খুলে নিয়ে আসা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও স্থাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন গুরুতর অসুস্থ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়। তাঁদের জেলা সদরে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘ নৌপথ পাড়ি দিতে গিয়ে স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এ জন্য জ্বালানি তেল বা জনবল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এরপরও স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় অ্যাম্বুলেন্সটি প্রায় তিন বছর চালু রাখা হয়েছিল।

আরও পড়ুন

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪ অক্টোবরের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটি অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকে নলচিরা ঘাটে। এর মধ্যে নৌ অ্যাম্বুলেন্স থেকে খুচরা কিছু যন্ত্রাংশও চুরি হয়েছে। প্রায় সাত মাস পার হতে চলেছে, কিন্তু অচল নৌ অ্যাম্বুলেন্স এখনো সচল হয়নি।

জরুরি ভিত্তিতে নৌ অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করার বা নতুন একটি আধুনিক নৌ অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন হাতিয়ার নলচিরা এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাসখানেক আগে তাঁর এক আত্মীয় হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে নিতে গিয়ে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। অনেকটা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে তাঁরা স্পিডবোট নিয়ে নদী পার হয়েছেন। আসলে হাতিয়ার মতো একটি দ্বীপের জন্য এই নৌ অ্যাম্বুলেন্স কতটা জরুরি, তা যাঁদের পরিবারের কোনো সদস্য গুরুতর অসুস্থ হন—তাঁরা বুঝতে পারবেন।