শেরপুরে হাজং জনগোষ্ঠীর ‘নয়া খাওয়া’ নবান্ন উৎসব উদ্যাপন
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় হাজং জনগোষ্ঠীর বিলুপ্তপ্রায় নবান্ন উৎসব ‘নয়া খাওয়া’ নানা আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার উপজেলার কয়রাকুড়ি গ্রামের হাজংপল্লিতে দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
হাজং জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জনউদ্যোগ সংগঠনের শেরপুর কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠনের শেরপুর জেলা শাখা ও ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি)।
সকালে স্থানীয় একটি ধানখেতের পাশে হাজংদের প্রাচীন রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয় বাস্তুপূজা। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দ ঘিরে শস্য দেবতার উদ্দেশে নৈবেদ্য উৎসর্গ করা হয়। পরে সবাই মিলে অংশ নেন ঐতিহ্যবাহী এ ‘নয়া খাওয়া’ আসরে। বিন্নি ধানের ভাত, মাষকলাইয়ের ডাল ও নানা সবজি দিয়ে সাজানো হয় দুপুরের বিশেষ আপ্যায়ন।
উৎসব ঘিরে আয়োজিত আলোচনা সভায় হাজংদের নবান্ন ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির সংকট এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তব্য দেন শেরপুরের হাজং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র সরকার, স্থানীয় বাসিন্দা সেন্টু হাজং, কবি জ্যোতি পোদ্দার। আরও বক্তব্য দেন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, শেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল কাদির, প্রাণ-প্রকৃতি গবেষক শহীদুজ্জামান, আদিবাসী নেতা সুমন্ত বর্মন প্রমুখ।
বাংলাদেশ জাতীয় হাজং সংগঠন শেরপুরের সভাপতি সুকুমার হাজং বলেন, ‘নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। নয়া খাওয়া শুধু উৎসব নয়, এটি আমাদের পরিচয়ের অংশ। নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্য তুলে ধরতেই এ আয়োজন।’
অনুষ্ঠানে সমাজসেবা ও হাজং জাতিসত্তার উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সংগঠনের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক কল্পনা হাজংকে সম্মাননা স্মারক ও উত্তরীয় পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
হাজং শিল্পীদের নৃত্য ও গানের পরিবেশনায় প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় মানুষের উপস্থিতি ও তরুণদের অংশগ্রহণে বহু পুরোনো এই নবান্ন ঐতিহ্য নতুন করে জেগে ওঠে।