খামারের ছয়টি গরু চুরির পর থেকে কাঁদছেন চাপা রানী

গরু চুরির হওয়ার পর থেকে খামারের সামনে থেকে সরছেন না চাপা রানী। মঙ্গলবার দুপুরে শরীয়তপুর সদরের ধানুকা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সংসারে সচ্ছলতা আনতে গরুর খামার দিয়েছিলেন চাপা রানী দাস (৪০)। খামারের আটটি গরুর মধ্যে তিনটি দুধ দিত। সেই দুধ বিক্রি করে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাতেন চাপা রানী।

সোমবার গভীর রাতে দুধ দেওয়া তিনটি গাভিসহ খামারের ছয়টি গরু চুরি হয়ে যায়। এর পর থেকে দিশাহারা হয়ে কাঁদছেন তিনি।

চাপা রানী দাস শরীয়তপুর সদরের ধানুকা এলাকার সুশীল দাসের স্ত্রী। জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে শরীয়তপুর-মাদারীপুর সড়কের পাশে তাঁদের বাড়ি।

সুশীল দাস জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অফিস সহকারীর চাকরি করেন। স্বামীর আয়ে সংসার চলত না ঠিকমতো। সংসারে সচ্ছলতা আনতে ১৪ বছর আগে বাড়ির আঙিনায় গরুর খামারটি দেন চাপা রানী।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামন দিয়ে শরীয়তপুর-মাদারীপুর সড়ক। এর দক্ষিণ পাশে চাপা রানীর বাড়ি এবং উত্তর পাশে জেলা প্রশাসকের বাসভবন। গভীর রাতে চোরেরা ট্রাকে করে গরুগুলো চুরি করে নিয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চাপা রানী দাস জানান, আজ ভোরে গরুগুলোকে খাবার খাওয়ানোর জন্য খামারে যান তিনি। সেখানে গিয়ে দেখেন, খামারের দরজা ভাঙা, ছয়টি গরু নেই।

আজ দুপুরে ধানুকা এলাকায় চাপা রানীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গরুগুলো হারিয়ে খামারের পাশে বসে কাঁদছেন চাপা রানী। এ সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৬ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। ১৪ বছর আগে গরুর খামার দিই। সন্তানের মতো স্নেহ–মমতা দিয়ে খামারটি তিলে তিলে গড়ে তুলেছি। আজ সন্তান হারানের মতো কষ্ট হচ্ছে।’

তিনটি গাভির দুধ বিক্রি করে ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ দিতেন বলে জানান এ নারী। তিনি বলেন, ‘গরুর খামারটি আমার পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার অবলম্বন ছিল। শূন্য খামার দেখে বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠছে।’

অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় সুশীল দাসকে। তাঁর স্ত্রী একার পরিশ্রমে গরুর খামার, সংসার ও সন্তান আগলে রাখেন। সুশীল দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসারে সুখ আনতে চাপা এত পরিশ্রম করেছে, কিন্তু ওকে কখনো ক্লান্ত ও বিষণ্ণ হতে দেখিনি। গরুগুলো চুরি হওয়ার পর আজ দিনভর কেঁদেছে। ওকে ভেঙে পড়তে দেখে আমিও কেঁদেছি।’

চাপা রানীর গরুর খামারটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জানিয়ে শরীয়তপুরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন বলেন, রাতে পুলিশের টহল দল ওই এলাকায় ছিল। খামারের সামনেই ডিসি স্যারের বাসা। সেখানেও নিরাপত্তারক্ষীরা ছিলেন। এমন একটি স্থান থেকে কীভাবে ছয়টি গরু চুরি হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।