৬৬ দিনে ধান সংগ্রহের পরিমাণ শূন্যের কোঠায়

সরকারি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে ধান–চালের মূল্য বেশি। এই কারণে কৃষকেরা গুদামে ধান–চাল দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

■ চুক্তির বাইরে থেকে গেছেন ৯২ মিলার।

■ সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ার আর মাত্র ৩৮ দিন বাকি রয়েছে।

■ ৬৬ দিনে এক গ্রাম ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।

■ চাল সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা জেলার মানচিত্র

চুয়াডাঙ্গা জেলায় চলতি আমন মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তরের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত সংগ্রহ শুরুর ৬৬ দিন পরেও জেলার ৫টি খাদ্যগুদামে কোনো ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি অধিদপ্তর। এ সময়ে চাল সংগ্রহও হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৯ শতাংশ। সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ার আর মাত্র ৩৮ দিন বাকি রয়েছে।

ধান-চাল সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি সংগ্রহ মূল্যের তুলনায় বাজারদর বেশি হওয়ায় কৃষকেরা সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। লাইসেন্স রক্ষায় কিছু চালকলমালিক খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চাল বিক্রি করলেও জেলার বেশির ভাগ চালকলমালিক চুক্তির বাইরে রয়েছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে এবার সরকারিভাবে জেলার ৫টি খাদ্যগুদামে ২ হাজার ২৫৫ মেট্রিক টন ধান ও ৩ হাজার ৮৩৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের ১৭ নভেম্বর সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আমন মৌসুমের ধান–চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হবে। গত ৬৬ দিনে এক গ্রাম ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। তবে এ সময়ে চাল সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ১১৫ দশমিক ৫২০ মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৯ শতাংশ।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এ কে এম শহিদুল হক বলেন, সরকারিভাবে ধানের সংগ্রহ মূল্য প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১ হাজার ১২০ টাকা।
অন্যদিকে, হাটবাজারে বর্তমানে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকেরা ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ীরা ধান কিনে রেখেছেন। কৃষকের কাছে ধানই তো নেই, খাদ্য গুদামে ধান দেবেন কীভাবে? ধানের বাজারদর বেশি হওয়ায় চালের দরও সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি। চালের সরকারি মূল্য প্রতি কেজি ৪২ টাকা হলেও বাজারে এ দরে চাল পাওয়া যাচ্ছে না।

শহিদুল হক বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে গুদামে ধান সংগ্রহের কোনো সম্ভাবনাই দেখছি না। পুরো জেলায় মোট ১৫৯ জন মিলারের (চালকলমালিক বা উৎপাদনকারী) মধ্যে ৬৭ জন মিলার চাল বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় মিল রয়েছে। চুক্তির বাইরে থেকে গেছেন ৯২ মিলার। যেসব মিলার সরকারের অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে সাড়া দেননি, সংগ্রহ অভিযান শেষে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ সাপ্তাহিক হাটে গত শুক্রবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোটা চালের পাইকারি বাজারদর প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৪৬ টাকা এবং প্রতি কেজি ধানের দর ৩০ টাকা। বিপরীতে সরকারি সংগ্রহমূল্য প্রতি কেজি চাল ৪২ টাকা এবং প্রতি কেজি ধান ২৮ টাকা।

আলমডাঙ্গা উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের কৃষক আবদুল কুদ্দুস বলেন, সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের সময় আর্দ্রতা ১৪ শতাংশের নিচে থাকার বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে। আর্দ্রতার এই বাধ্যবাধকতা হাটবাজার বা আড়তগুলোতে বিক্রির ক্ষেত্রে নেই। তা ছাড়া গুদামে ধান দিতে পরিবহন খরচ রয়েছে। উল্টো দিকে অনেক সময় বাড়িতে বসেই ধান বিক্রি করা যায়। হাটবাজার বা আড়তে ধান বিক্রি করলে নগদ টাকা পাওয়া যায়। সরকারি গুদামে বিক্রির পর টাকা পেতেও কয়েক ধাপের প্রক্রিয়া পার করতে হয়। এসব কারণে তাঁর মতো অনেক কৃষক খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির আগ্রহ হারিয়েছেন।